মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির দুই দফা জানাজা শেষে রাজশাহীতে সমাহিত

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম

প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির দুই দফা জানাজা শেষে রাজশাহীতে সমাহিত

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলামকে আজ রাজশাহীর সপুরা কবরস্থানে সমাহিত করা হবে। এর আগে ঢাকা ও রাজশাহীতে দুই দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় সারাদেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, এই দুর্ঘটনায় স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম নিহত হয়েছেন। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসে এক ভয়াবহ চিত্র। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ২৫ জনই কোমলমতি শিশু। এটি দেশের বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে এক নজিরবিহীন মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছাকাছি একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনার পরপরই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
 

নিহত স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলামের মামা রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, সোমবার মৃত্যুর খবর জানার পর তৌকিরের পরিবারের সদস্যদের দ্রুত ঢাকায় নেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকায় প্রথম জানাজা শেষে তার মরদেহ জন্মভূমি রাজশাহীতে আনা হবে। রাজশাহীর উপশহর ঈদগাহ মাঠে দ্বিতীয় দফায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে এবং এরপর বিকালে সপুরা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির একজন অত্যন্ত মেধাবী ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তা ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে গভীর শোক বিরাজ করছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজশাহীর সপুরা গোরস্থানে তার কবর প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে, যা স্থানীয়দের মধ্যেও শোকের আবহ তৈরি করেছে।
 

এই দুর্ঘটনার পর দেশের প্রশিক্ষণ বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে প্রশিক্ষণ ফ্লাইটের যৌক্তিকতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। সামরিক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশিক্ষণ বিমানের রুট এবং ফ্লাইট পরিকল্পনা প্রণয়নে আরও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, বিশেষ করে যখন তা আবাসিক এলাকার উপর দিয়ে যায়। অতীতেও বাংলাদেশে ছোট আকারের বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, তবে এবারের মতো বিপুল সংখ্যক বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশুর প্রাণহানি অত্যন্ত বিরল। এই ঘটনা বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ পদ্ধতির পাশাপাশি বেসামরিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নতুন করে নীতি নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং এর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

 

এই দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিমান বাহিনী প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। নিহত শিশুদের পরিবারে নেমে এসেছে চরম শোকের মাতম। সারাদেশের মানুষ এই ঘটনায় স্তম্ভিত ও মর্মাহত। বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, পাইলটদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে আরও জোর দিতে হবে। একই সাথে, বেসামরিক স্থাপনার কাছাকাছি ঝুঁকিপূর্ণ ফ্লাইট রুট পরিহার করা অত্যাবশ্যক। এই দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে বাধ্য করে, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সচেতন মহল।