আগস্ট ১০, ২০২৫, ০২:১৮ পিএম
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে যখন নতুন করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, তখন ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাত কেবল একটি সামরিক দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এটি ইরানের সামরিক সক্ষমতা এবং কৌশলগত দুর্বলতাগুলোকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। গত ১৩ই জুন, ইসরায়েলের 'অপারেশন রাইজিং লায়ন' নামে এক হামলায় তেহরানসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি শহর কেঁপে ওঠে।
এর জবাবে ইরানও ইসরায়েলের দিকে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। কিন্তু দুই সপ্তাহের এই সংঘাতে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দুর্বলতা এবং ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে ভুলগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
১৯৭৯ সালের পর থেকে ইরানের নীতিগত ভুল এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির বিমান বাহিনীর সক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এর ফলে, ইসরায়েলের মতো উন্নত সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এই সংঘাতের মাধ্যমে এটি আরও পরিষ্কার হয়েছে যে, ইরান অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক এবং ভূরাজনৈতিক দিকগুলোকে অবহেলা করেছে। এর সুযোগে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই ঘটনা ইরানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার প্রতি এক বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
এই সংকটের পর ইরান পশ্চিমা নেভিগেশন সিস্টেম বা জিপিএসের উপর নির্ভরতা কমিয়ে চীনের 'বেইডো' সিস্টেম ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এটি তাদের সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় পশ্চিমা প্রভাব কমানোর একটি কৌশল। এছাড়াও, ভবিষ্যতে ইরান চীন থেকে আরও উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা করছে বলেও খবর রয়েছে। তবে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। চীন ইরানকে সামরিক সাহায্য দিতে চাইলেও, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির কারণে এটি একটি জটিল বিষয়।
সব মিলিয়ে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকেই নষ্ট করেনি, বরং এটি ইরানের সামরিক দুর্বলতাকে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে। এই সংকট তেহরানকে নতুন করে তাদের সামরিক কৌশল এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছে।