মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২

আফগানিস্তানে সিআইএ‍‍`র ব্যর্থতা: গোয়েন্দা তথ্যের দুর্বলতা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২৩, ২০২৫, ১০:৩৫ এএম

আফগানিস্তানে সিআইএ‍‍`র ব্যর্থতা: গোয়েন্দা তথ্যের দুর্বলতা

ছবি- সংগৃহীত

২০ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার এবং তালেবানের ক্ষমতা দখল কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যর্থতা নয়, বরং গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এরও এক বিরাট ব্যর্থতা। মার্কিন অনুসন্ধানী সাংবাদিক টিম ওয়াইনার তার বই 'দ্য মিশন: আমেরিকান ইন্টেলিজেন্স ইন দ্য ২১স্ট সেঞ্চুরি'-তে এই ব্যর্থতার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।

 একসময় মনে করা হতো যুক্তরাষ্ট্র চাইলে সবকিছুই সম্ভব করতে পারে। কিন্তু আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে সিআইএ'র মধ্যে সীমাবদ্ধতা, অজ্ঞতা এবং ভুল বিশ্লেষণ ছিল প্রকট। এটি গোয়েন্দা বিদ্যার একটি নতুন শাখা 'ইন্টেলিজেন্স ফেইলিওর' বা 'إخفاق استخبارات'-এর জন্ম দিয়েছে। সিআইএ'র জন্ম হয়েছিল বিশ্বকে বোঝার জন্য, কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে তারা বিশ্বকে বদলানোর দিকে বেশি মনোযোগ দেয়। ইরান, কঙ্গো, চিলিতে তাদের হস্তক্ষেপ ছিল, কিন্তু কিউবার 'বে অব পিগস' অভিযানের মতো বিপর্যয়ও ঘটে।

 ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সিআইএ দুর্বল হয়ে পড়ে। এর মধ্যেই ১৯৯৮ সালে আল-কায়েদা মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর আমেরিকা বাধ্য হয়ে সরাসরি যুদ্ধে নামে। প্রাথমিকভাবে তালেবানকে সরিয়ে আল-কায়েদাকে ধ্বংস করাই ছিল লক্ষ্য। সিআইএ উত্তর জোটকে সহায়তা করে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সফল হয়। কিন্তু এরপর কী হবে, সেই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছিল না।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার পেছনে চারটি প্রধান কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে: ১. কৌশলগত অন্ধত্ব: আফগান সমাজ ও উপজাতীয় কাঠামো বোঝার ক্ষেত্রে সিআইএ'র ব্যর্থতা। ২. দুর্নীতি: ডলার ও বিলাসবহুল সরঞ্জাম দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের কেনার চেষ্টা, যা ব্যাপক দুর্নীতির জন্ম দেয়। ৩. মনোযোগের পরিবর্তন: আফগানিস্তান থেকে ইরাকের দিকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া। ৪. পরিকল্পনার অভাব: শুধু তাৎক্ষণিক সাফল্যকে প্রাধান্য দেওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার অভাব।

 ২০০১ সালের শেষের দিকে তালেবান পতনের পর শান্তি আলোচনার সুযোগ হাতছাড়া করা হয়। এরপর দুই দশক ধরে চলে যুদ্ধ। অবশেষে ২০২১ সালে বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে কাবুলে তালেবানের পুনরুত্থান হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য 'দ্বিতীয় সায়গন' এর মতো অপমানের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই ব্যর্থতার পর ইরাক যুদ্ধেও সিআইএ একই ধরনের ভুল করে।

সাবেক সিআইএ পরিচালক রবার্ট গেটস অকপটে স্বীকার করেন, "৯/১১'র আগে আমরা জানতামই না আল-কায়েদা আসলে কী।" আফগানিস্তানের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, শুধু সামরিক শক্তি বা অর্থ নয়, গোয়েন্দা ব্যর্থতাও একটি দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিতে পারে।