সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ১০:০৮ এএম
রাজনৈতিক এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আট বছরে শ্রমিকনেতা ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মোট ৪৫টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে অভিযুক্ত ও অজ্ঞাতনামাসহ মোট ৪৭ হাজার ৭২৮ জন শ্রমিক মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। তবে শ্রমিক হত্যার অভিযোগে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন থানায় শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মোট ৪৫টি মামলা ছিল। এর মধ্যে ঢাকার আশুলিয়া থানায় ১৫টি, গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় ১৪টি, কোনাবাড়ী থানায় ১০টি, জয়দেবপুর থানায় ২টি, বাসন থানায় ২টি এবং টঙ্গী পশ্চিম থানায় ২টি মামলা ছিল। মামলাগুলো মূলত ২০২৩ সালে দায়ের হয়েছিল, তবে কয়েকটি মামলা ২০১৫ এবং ২০২১ সালেরও ছিল।
সরকারের নথি অনুযায়ী, এসব মামলা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও শ্রমিকনেতারা বলছেন, অধিকার আদায়ের আন্দোলন করার কারণেও অনেক মামলা হয়েছিল। ১১টি মামলার বাদী ছিল বিভিন্ন থানার পুলিশ, বাকিগুলোর বাদী ছিলেন মালিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কারখানার নিরাপত্তা কর্মকর্তা, মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইন উপদেষ্টা এবং গাড়িচালক। অধিকাংশ মামলা বেআইনি সমাবেশ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, এবং হামলার অভিযোগে দায়ের করা হয়। মূলত পোশাক কারখানায় বেতন-ভাতা নিয়ে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এসব মামলা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ইউনিয়ন ফেডারেশন ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন জানায়। এরপর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে চিঠি পাঠায়। তবে এই বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি হচ্ছিল না। পরবর্তীতে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বৈঠকের পর বিষয়টি গতি পায়। বৈঠকের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে বৈঠক করে এবং মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, "রাজনৈতিক এবং অধিকার আদায়ে আন্দোলন করার কারণে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এগুলো প্রত্যাহারে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়, যা রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে কঠিন ছিল।"