বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

বিশ্বজুড়ে সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি: কারণ ও প্রভাব

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০৪:২৮ পিএম

বিশ্বজুড়ে সোনার দামের ঊর্ধ্বগতি: কারণ ও প্রভাব

ছবি - সংগৃহীত

বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বর্তমানে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। গত এক বছরে সোনার দাম প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে প্রতি আউন্স তিন হাজার ৫৫০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের অস্থিরতা এড়িয়ে একটি নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়লে এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সোনা কেন এখন এত জনপ্রিয়?

অস্ট্রেলিয়ার কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলেন, সোনাকে দীর্ঘদিন ধরেই বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা বা অস্থিরতার সময়ের জন্য পছন্দের সম্পদ মনে করে আসছেন, কারণ শেয়ারের তুলনায় এর দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে। তিনি বলেন, আর্থিক বাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো অনিশ্চয়তা, আর এমন পরিস্থিতিতে সোনা ব্যবসায়ীদের ভরসার জায়গা হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিকভাবে সোনা সীমিত মুনাফা দিলেও, গত দুই বছরে ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধ এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের মতো বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে এর দাম দ্রুত বেড়েছে।

যেসব বিনিয়োগকারী সরকার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখেন না, তারাও সোনা পছন্দ করেন, কারণ এটি এমন একটি সম্পদ যা শারীরিকভাবে নিজের কাছে রাখা ও সংরক্ষণ করা যায়।

ট্রাম্প কিভাবে সোনার দাম বাড়াচ্ছেন?

এপ্রিল মাসে ট্রাম্প বিশ্বের বহু দেশের বিরুদ্ধে তাঁর 'লিবারেশন ডে' শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে এবং তখনই সোনার দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এছাড়াও, ট্রাম্প বারবার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার কমাতে চাপ দিচ্ছেন এবং ডলারের মানও কমাতে চান, যা মার্কিন রপ্তানিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।

ক্যাপিটাল ডট কমের সিনিয়র আর্থিক বিশ্লেষক কাইল রডার মতে, এই দুই পরিস্থিতিই সোনাকে বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। যদি সুদের হার কমে যায়, তাহলে ব্যাংক বা সরকারি বন্ডের মতো সুদযুক্ত সম্পদ থেকে আয় কমে যায়, তখন সোনা ধরে রাখা তুলনামূলকভাবে বেশি লাভজনক হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, ডলার দুর্বল হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা একই পরিমাণ অর্থে বেশি সোনা কিনতে পারেন, যা সোনার দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কী ঘটছে?

অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক অস্থিরতাও সোনার বাজারকে উসকে দিচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটিশ পাউন্ড এবং জাপানি ইয়েনের মান কমে গেছে, যার কারণ হলো ওই দেশগুলোর সরকারি অর্থনীতির দুর্বলতা নিয়ে উদ্বেগ। টিম ওয়াটারার বলেন, যখন কোনো মুদ্রার মান কমতে থাকে, তখন সোনা মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়ার ভালো একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়। রডা আরও বলেন, ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি মার্কিন সম্পদ ধরে রাখার ওপর আস্থা কমিয়ে দিয়েছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে। ফলে যেসব দেশের হাতে প্রচুর ডলার আছে, তারা সেগুলো দিয়ে সরকারি বন্ড না কিনে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনা কিনছে, যা সোনার দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বিনিয়োগকারীরা কীভাবে সোনা কিনছেন?

সোনায় বিনিয়োগের দুটি প্রধান উপায় রয়েছে। প্রথমত, সরাসরি সোনার বার, গলানো সোনা, গয়না বা মুদ্রা কেনা। দ্বিতীয়ত, আর্থিক পণ্যের মাধ্যমে বেচাকেনা। বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যৎ চুক্তি (ফিউচার্স) কেনাবেচা করেন, যেখানে নির্দিষ্ট দামে ভবিষ্যতে সোনা কেনা বা বিক্রির শর্ত থাকে। এছাড়াও, বিনিয়োগ তহবিল রয়েছে, যা সোনার দামের ওঠানামা অনুসরণ করে। ব্যক্তি পর্যায়ে সরাসরি সোনা কেনা সহজ হলেও, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত আর্থিক পণ্য ব্যবহার করে, কারণ এতে তাদের প্রচুর সোনা হাতে রাখতে বা সংরক্ষণ করতে হয় না।