রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আতঙ্ক ‘কিসিং বাগস’, প্রাণঘাতী চাগাস রোগের ঝুঁকি বাড়ছে

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আতঙ্ক ‘কিসিং বাগস’, প্রাণঘাতী চাগাস রোগের ঝুঁকি বাড়ছে

ছবি - সংগৃহীত

ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের ৩২টি রাজ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এক ভয়ংকর পোকা, যা 'চুম্বনকারী পোকা' (Kissing Bugs) নামে পরিচিত। এই পোকার কামড় থেকে প্রাণঘাতী চাগাস রোগ হতে পারে, যা স্থানীয় প্রশাসন ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এবিসি৭ আইউইটনেস নিউজের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই পরজীবী সংক্রমণ এখন ক্যালিফোর্নিয়াতেও দেখা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে যে, সময় মতো রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না হলে এই সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, এমনকি মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

কেন এই পোকা 'চুম্বনকারী' নামে পরিচিত?

এই পোকা সাধারণত রাতে মানুষের ঘুমন্ত অবস্থায় মুখের চারপাশে, বিশেষ করে ঠোঁট ও চোখের কাছে কামড় দেয়। রক্ত চোষা স্বভাবের কারণে এটি মানুষ, পোষা প্রাণী এবং বন্য প্রাণীর ওপর নির্ভর করে। টেক্সাস এঅ্যান্ডএম-এর কিসিং বাগস প্রোগ্রাম অনুসারে, মুখের এই সংবেদনশীল অংশে কামড়ানোর প্রবণতার জন্যই এই পোকার এমন নামকরণ হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গ্রিফিথ পার্কের মতো বনাঞ্চলে এদের উপস্থিতি বেশি দেখা যায়।

চাগাস রোগ কী?

চাগাস রোগ আমেরিকান ট্রাইপানোসোমিয়াসিস নামেও পরিচিত। এটি ‘ট্রাইপানোসোমা ক্রুজি’ নামক এক ধরনের পরজীবীর মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত, পোকা কামড়ানোর পর মলত্যাগ করে এবং সেই মল থেকে পরজীবী মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। রোগের লক্ষণগুলো দুটি পর্যায়ে দেখা যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা যায়। যদি প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা না হয়, তবে ১০ থেকে ৩০ বছর পর রোগটি দীর্ঘস্থায়ী পর্যায়ে চলে যায়। এই সময় পরজীবী হৃৎপিণ্ড এবং হজমতন্ত্রের পেশিগুলোতে লুকিয়ে থাকে, যার ফলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হয়ে যাওয়া, হৃদরোগের অবনতি এবং হঠাৎ মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

চাগাস রোগের চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। ‘বেনজনিডাজল’ বা ‘নিফুরটিমক্স’ নামক ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের কার্যকারিতা কমতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোকা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহারের চেয়ে সচেতনতা বাড়ানোই সবচেয়ে ভালো প্রতিরোধ। নিজেদের এবং পোষা প্রাণীদের সুরক্ষিত রাখতে রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা এবং ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা জরুরি। এই পোকা স্থানীয় বন্যপ্রাণীর মধ্যে পাওয়া গেলেও, মানুষের মধ্যে সরাসরি ছড়ায় না। তবে পোকার মাধ্যমে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।