মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

গত ২ দশকে ১৫টি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত অর্ধশতাধিক

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০১:২৯ পিএম

গত ২ দশকে ১৫টি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত অর্ধশতাধিক

ছবি- সংগৃহীত

বিগত ২০ বছরে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী (বিএএফ) এবং বিভিন্ন ফ্লাইং একাডেমির প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষ আহতও হয়েছেন। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণে এই চিত্র আরও স্পষ্ট হয়।

উল্লেখযোগ্য সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার তালিকা:

  • ৯ মে, ২০২৪: চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় কর্ণফুলী নদীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি ইয়াক-১৩০০ (YAK-130) প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়, এতে স্কোয়াড্রন লিডার আসিম জাওয়াদ নিহত হন।

  • ২৩ নভেম্বর, ২০১৮: টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় প্রশিক্ষণ মিশনে থাকা বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হলে উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দীপু নিহত হন।

  • ১ জুলাই, ২০১৮: যশোরে একটি কে-৮ডব্লিউ (K-8W) প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার মো. সিরাজুল ইসলাম এবং স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশ নামের দুই পাইলট নিহত হন।

  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৭: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দুটি ইয়াক-১৩০০ (YAK-130) প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। তবে সৌভাগ্যবশত, বিমানের চারজন ক্রুকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল।

  • ২৯ জুন, ২০১৫: ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তাহমিদ বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হন যখন তার এফ-৭ বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

  • ১৪ জুলাই, ২০১৩: চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এই ঘটনায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আবু জিহাদ আরাফাত অক্ষত অবস্থায় রক্ষা পান।

  • ২০ ডিসেম্বর, ২০১০: বরিশাল বিমানবন্দরের কাছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে স্কোয়াড্রন লিডার মাহমুদুল হক এবং আশরাফ ইবনে আহমেদ নামের দুই পাইলট নিহত হন।

  • ৮ এপ্রিল, ২০০৮: টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় স্কোয়াড্রন লিডার মোরশেদ হাসান তার এফ-৭ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান।

  • জুন, ২০০৫: ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান টিনের ছাউনি দেওয়া একটি বাড়িতে বিধ্বস্ত হয়, এতে দুটি শিশুসহ ছয়জন আহত হন।

  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩: তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (বর্তমান শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর) থেকে উড্ডয়নের সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়।

  • ৩০ জুলাই, ২০০২: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার একটি গ্রামে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এর পাইলট এবং তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন, পাশাপাশি ১০ জন আহত হন।

ফ্লাইং একাডেমির দুর্ঘটনার চিত্র:

  • ৩১ মার্চ, ২০১৫: রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে একটি ফ্লাইং ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে একজন প্রশিক্ষণার্থী পাইলট মারা যান।

  • ১৩ এপ্রিল, ২০১৩: শাহ মখদুম বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির একটি সেসনা-১৫২ (Cessna 152) বিমান প্রশিক্ষণ উড্ডয়নের সময় বিধ্বস্ত হয় এবং উল্টে যায়। একজন ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টর এবং একজন প্রশিক্ষণার্থী পাইলট গুরুতর আহত অবস্থায় রক্ষা পান।

  • ৭ জুন, ২০০২: ঢাকার উত্তরায় পারাবাত ফ্লাইং একাডেমির আরেকটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এর পাইলট মোকলেসুর রহমান সাকিব ঘটনাস্থলেই মারা যান।

  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৮: এর আগে, ঢাকায় পোস্টগোলায় একটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পারাবাত এয়ারলাইন্সের একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে এর পাইলট ফারিয়া লারা এবং সহ-পাইলট রফিকুল নিহত হন।

এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর এবং চলমান সমস্যা। বিশেষ করে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন দুর্ঘটনাগুলো আরও বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যেমনটি গতকাল উত্তরায় ঘটেছে। এই ধারাবাহিক Accidents & Fires -এর পেছনের কারণগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা এবং কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।