মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম

বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ও আহতদের হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ২৬ জন শিশুসহ মোট ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এছাড়াও ৭০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ভয়াবহ ঘটনাটি দেশের জনমনে গভীর শোক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, নিহত ২৭ জনের মধ্যে ১৭টি শিশুর নাম ও বয়স নিশ্চিত করা হয়েছে, এবং আরও ৯টি শিশুর মৃতদেহ শনাক্তের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলামসহ ৪ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিও এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে যে মৃতের সংখ্যা অনুমান করা হচ্ছিল, তা থেকে এই তালিকা অনেক বেশি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, অনেক মৃতদেহ পুড়ে বা বিকৃত হয়ে যাওয়ায় শনাক্তকরণে বিলম্ব হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় আহত ৭০ জন বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। এছাড়াও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ), কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

আহতদের শ্রেণিবিন্যাস করলে দেখা যায়:

  • শিক্ষার্থী: ৪০ জন

  • শিক্ষক: ৬ জন

  • সেনাসদস্য: ১৫ জন

  • স্কুল স্টাফ: ১ জন

  • দমকলকর্মী: ১ জন

  • পুলিশ: ১ জন

  • ইলেকট্রিশিয়ান: ১ জন

  • মেইড: ১ জন

  • অন্যান্য: ৪ জন

আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে, বিশেষ করে যারা অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। চিকিৎসকরা তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই ঘটনায় বহু পরিবার তাদের সন্তান, স্বজন ও প্রিয়জনকে হারিয়েছে, যা এক অপূরণীয় ক্ষতি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহত ও আহতদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য একটি ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে। ডেপুটি সিভিল সার্জন সরকার ফারহানা কবীরকে (মোবাইল নম্বর: ০১৭৯২৭৪৪৩২৫) এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা হতাহতদের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটেও এই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যা জনসাধারণের জন্য তথ্যের উন্মুক্ততা নিশ্চিত করেছে।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি সারাদেশে গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রতি গভীর শোক ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়েছে। তবে একই সাথে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উপর দিয়ে প্রশিক্ষণ বিমানের উড্ডয়ন এবং এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশিক্ষণ বিমানের রুট পরিবর্তন, উন্নত নিরাপত্তা প্রটোকল এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্ঘটনার মূল কারণ উদঘাটন এবং দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বেসামরিক বিমান চলাচল ও সামরিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালায় মৌলিক পরিবর্তন আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে সচেতন মহল।

সূত্র: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র।