মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

‍‍`হর্ন বাজাবেন না‍‍`: বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে নীরব সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০২:৫৯ পিএম

‍‍`হর্ন বাজাবেন না‍‍`: বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের পাশে নীরব সেবার অনন্য দৃষ্টান্ত

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহতদের চিকিৎসায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই দুঃসময়ে, হাসপাতালের সামনের রাস্তায় একদল স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থী যে নিরবচ্ছিন্ন ও মানবিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন, তা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তারা শুধু যানজট নিয়ন্ত্রণই করছেন না, আহতদের দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছাতে অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে নিরবে অনুরোধ করছেন— 'হর্ন বাজাবেন না'

ক্লান্তি থাকলেও মানবিকতার দীপ্তি স্পষ্ট। তাদের মূল লক্ষ্য, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন শান্তি নিশ্চিত করা। রুবিনা খাতুন নামের এক স্বেচ্ছাসেবী জানান, "আমি নিজে থেকেই এখানে এসেছি। অযথা যেন বার্নের সামনে কেউ হর্ন না বাজায়, সেজন্য এই প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার মনে হয়েছে, দুঃসময় চলছে, সেজন্য আমার নিজে থেকেই কিছু করা উচিত।"

আরেক স্বেচ্ছাসেবী হৃদয় যোগ করেন, "আমি নিজেই এসে রাস্তায় যেন যানজট না লাগে, কেউ যেন হর্ন না বাজায়, সেজন্য আমার এই ছোট্ট উদ্যোগ। সবাই খুব সহযোগিতা করছেন।" ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে পথ করে দিচ্ছেন এবং হাসপাতালের প্রবেশপথে একটি শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করছেন। তাদের এই উদ্যোগ কেবল আহতদের মানসিক শান্তি দিচ্ছে না, বরং দ্রুত চিকিৎসা সেবায়ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখছে।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান মঙ্গলবার সকালে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ সম্মেলনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সর্বশেষ হতাহতের সংখ্যা জানিয়েছেন। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জনই কোমলমতি শিশু। প্রাপ্তবয়স্ক দু’জনের মধ্যে রয়েছেন পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম এবং শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী।

অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান আরও জানান, বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে মোট ৭৮ জন চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪২ জন এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ২৮ জন ভর্তি রয়েছেন। সিএমএইচে ১৫ জনের মরদেহ ছিল, যার মধ্যে পাইলট তৌকিরের মরদেহও রাখা হয়েছে। ৬ জনের মরদেহ এখনো শনাক্ত করা যায়নি এবং তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন এবং সেখানে তিনজন ভর্তি আছেন, যার মধ্যে দু’জন আইসিইউতে রয়েছেন। এছাড়া, ইউনাইটেড হাসপাতালে একজনের মরদেহ আনা হয়েছে।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহতদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, বিশেষ করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরা আহতদের জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে এই স্বেচ্ছাসেবীদের কার্যক্রম একটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি প্রমাণ করে যে, দুর্যোগের সময়েও মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারে এবং ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমেও অনেক বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব। সারাদেশের মানুষ এই ট্র্যাজেডিতে শোকাহত হলেও, এই তরুণ স্বেচ্ছাসেবীদের মানবিক উদ্যোগ সমাজে আশার আলো দেখাচ্ছে।