মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের সরকারি চিকিৎসা: ৩০ দলের ঐকমত্যে জোর দাবি

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২২, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম

বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের সরকারি চিকিৎসা: ৩০ দলের ঐকমত্যে জোর দাবি

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরায় বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনায় পুরো জাতি শোকাহত। এই দুর্ঘটনা ঘিরে গভীর শোক ও সংহতি প্রকাশ করে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দল আহতদের দ্রুত সরকারি চিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৭তম দিনের আলোচনার আগে একটি শোক প্রস্তাব পাঠ ও তাতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে এই ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার পাঠ করেন শোক প্রস্তাবটি, যা দুর্ঘটনার ভয়াবহতা এবং এর পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরে। শোক প্রস্তাবে বলা হয়, সোমবার বাংলাদেশের বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে নিহত শিক্ষার্থী শিশুসহ সবার আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং নিহত ও আহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।

শোক প্রস্তাবের মূল দাবিগুলো ছিল:

  • ক্ষতিপূরণ: বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

  • সুচিকিৎসা: আহতদের দ্রুত এবং উন্নত সরকারি চিকিৎসার নিশ্চয়তা বিধান করা।

  • তদন্ত: বিমান দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যথাযথ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা।

  • পুনরাবৃত্তি রোধ: ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এই শোক প্রস্তাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টিসহ আলোচনায় অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং কমিশনের সদস্যরা স্বাক্ষর করেন। এটি দেশের প্রধান বিরোধী দল এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে একটি বিরল ঐকমত্যের ইঙ্গিত বহন করে।

আলোচনার সূচনা বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি বলেন, "গত বছর এই সময় আমরা একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। এক বছর পরে আজ এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকে মুহ্যমান হয়ে আছে পুরো জাতি।" অধ্যাপক রীয়াজ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বস্তরের মানুষকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। একই সঙ্গে, তিনি সরকারের প্রতি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতি শোক প্রস্তাবের গুরুত্ব এবং এর পেছনে থাকা বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সমর্থনকে আরও জোরালো করেছে।

এই ধরনের একটি জাতীয় দুর্যোগের সময় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ ধরনের ঐকমত্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সাধারণত, রাজনৈতিক বিভেদ দেখা গেলেও, এই ঘটনা প্রমাণ করে যে মানবিক বিপর্যয়ে জাতি ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, ৩০টি দলের এই স্বাক্ষর সরকারের ওপর একটি সম্মিলিত চাপ সৃষ্টি করবে যাতে দ্রুততম সময়ে দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন করা হয় এবং আহতদের জন্য সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা সরকারের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যেখানে তারা দ্রুত এবং স্বচ্ছ পদক্ষেপের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে। একই সঙ্গে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত তদন্ত প্রতিবেদন এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে দ্রুত স্পষ্টীকরণ দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। এই মুহূর্তে আহতদের জীবন রক্ষা এবং তাদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করাই সর্বাগ্রে বিবেচিত হচ্ছে।