বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তরায় ব্যাটারি রিকশা সিন্ডিকেট, জিম্মি মেট্রোরেলের যাত্রীরা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩০, ২০২৫, ১০:১৪ এএম

উত্তরায় ব্যাটারি রিকশা সিন্ডিকেট, জিম্মি মেট্রোরেলের যাত্রীরা

ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে রাজধানী ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য মেট্রোরেল এখন অনেকের পছন্দের বাহন। কিন্তু মেট্রোরেল স্টেশনগুলোকে ঘিরে গড়ে ওঠা পরিবহন সিন্ডিকেট, বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশার দৌরাত্ম্য, যাত্রীদের জন্য নতুন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তরা এলাকার মেট্রোরেল স্টেশনগুলোতে এমন সিন্ডিকেটের হাতে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উত্তরায় মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনকে ঘিরে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের গড়ে ওঠা ‘সিন্ডিকেট’ এখন রীতিমতো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এই সিন্ডিকেটের হাতে যাত্রীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। বাইরের রিকশাকে ঢুকতে না দেওয়া, জোর করে যাত্রী নামিয়ে নেওয়া, মারধর, হুমকি এবং গলাকাটা ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন—এসব চলছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। এমনকি পুলিশ বক্সের সামনেও ঘটছে এসব ঘটনা, কিন্তু কেউ যেন কিছু দেখেও দেখেন না।

জানা গেছে, সাভার, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, খাগান, আক্রান, চারাবাগসহ রাজধানীর উপকণ্ঠ থেকে মেট্রোরেলে চড়ে রাজধানীমুখী মানুষের ভরসা এখন একটাই: ব্যাটারিচালিত রিকশা। অথচ এই বাহনটিই এখন অনেকের জন্য ভোগান্তির নাম।

রোববার বিরুলিয়ার আক্রান মোড় থেকে মেট্রোরেল উত্তরা সেন্টার স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে রওনা দেন ব্যাটারি রিকশাচালক রমজান আলী। ঢাকা বোর্ড ক্লাব পার হয়ে পঞ্চবটি এলাকায় আসতেই উত্তরা এলাকার ৪-৫ জন ব্যাটারি রিকশাচালক তার রিকশার পথরোধ করেন। তারা জোর করে যাত্রীদের রিকশা থেকে নামিয়ে নেন। শুধু রমজান আলীর রিকশার যাত্রীই নয়, যেসব ব্যাটারিচালিত যান আসছে, সবগুলোর যাত্রী এভাবে নামিয়ে নিজেদের গাড়িতে উঠাতে দেখা যায় উত্তরা এলাকার ব্যাটারি রিকশাচালকদের। কোনো কোনো চালক প্রতিবাদ করতেই মারধর, হুমকি এমনকি রিকশার চাবি টেনে নেওয়া, ক্যাবল ছিঁড়ে দিতেও দেখা যায়। অথচ পাশেই রয়েছে ট্রাফিক পুলিশ বক্স, কিন্তু ট্রাফিক পুলিশ এসব দেখেও না দেখার ভান করে।

রিপন নামের এক ব্যাটারি রিকশাচালক বলেন, "রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না। কিন্তু ইদানীং এই এলাকার চালকরা জোট করে এসব অপকর্ম করছে। এদের সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু উগ্র চালক।" অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এই চালকদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন মামলার আসামি। আবার কেউ কেউ ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনের মতাদর্শের। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পালিয়ে এসে রিকশাচালকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন যাত্রী বলেন, "ওদের চোখের দিকে তাকালেই ভয় লাগে। কোনো কথা বলা যায় না। এরা সরাসরি গন্তব্যে যেতে না দেওয়ায় একদিকে ভোগান্তি, বারবার পরিবহন বদল করতে হয়, অন্যদিকে পকেটের টাকা বেশি খরচ হয়।"

ভুক্তভোগীরা জানান, বিরুলিয়ার আক্রান মোড় থেকে উত্তরা সেন্টার মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। আগে যেখানে এক বসায় যাওয়া যেত, এখন সিন্ডিকেটের বাধায় পঞ্চবটিতে নেমে অন্য রিকশায় উঠতে হয়। অথচ দুই কিলোমিটারের জন্য জনপ্রতি আদায় করা হয় ২০ টাকা। একটি রিকশায় তোলা হয় ছয়জন করে যাত্রী। আরেক ভুক্তভোগী আলি আহম্মেদ বলেন, "সময় বাঁচাতে এই পথে যাতায়াত করি। কিন্তু পথিমধ্যে নামিয়ে দিয়ে নিজের রিকশায় তুলতে বাধ্য করায় আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। আমরা টাকা দিচ্ছি ঠিকই, কিন্তু সম্মান পাচ্ছি না। যেন জিম্মি করে ভাড়া আদায় করছে।"

অন্যদিকে উত্তরা মেট্রো স্টেশনের নিচেও সারি সারি ব্যাটারিচালিত যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া নিয়ে যাত্রী পরিবহন করেন। বাইরের কোনো যানবাহনকে এখান থেকে যাত্রী নিতে দেন না তারা। আফজাল নামে এক রিকশাচালক বলেন, "এটা আমাদের এলাকা। এই এলাকায় আমরাই যাত্রী নেব। অন্য এলাকার চালকরা এখানে ঢুকবে কেন? ঢুকলে আমরা বাধা দেবই।"

এ ব্যাপারে ডিএমপির ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের ডিসি আনোয়ার সাঈদ বলেন, "পঞ্চবটি বাস স্টপেজের কাছেই তো আমাদের ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। এমন বিষয় আমাকে তো কেউ জানায়নি। এ ব্যাপারে আমি খবর নিয়ে দেখব।"

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উত্তরা এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন মেট্রোরেল স্টেশনের সামনের সড়কগুলো রীতিমতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অঘোষিত স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে।