সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ সংশ্লিষ্ট সব দায়ীর কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি জানান।সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেন, আন্দোলনের সময় তাকে কীভাবে ‘আয়না ঘরে’ রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল এবং আন্দোলন
দমানোর জন্য সমন্বয়কদের কীভাবে গুমের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সে ধরনের নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা আবারও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে পক্ষে-বিপক্ষে দুই ধরনের গণমাধ্যমই ছিল, তবে আন্দোলনের পরে গণমাধ্যমের যে ধরনের সংস্কার হওয়ার কথা ছিল, তা এখনো সেভাবে হয়নি।
নাহিদ ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া তার জবানবন্দিতে বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যা দেন এবং কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন।
তার মতে, শেখ হাসিনার এই বক্তব্য আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার একটি বৈধতা তৈরি করে দেয়, কারণ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন হলেই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা হতো, যাতে আন্দোলনের ন্যায্যতা খাটো হয়ে যায়।তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার ওই মন্তব্যে দেশের শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করে এবং সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ বলেন, ১৫ জুলাই তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। পরদিন, ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয় এবং পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদসহ ছয়জন সেদিন প্রাণ হারান। ১৭ জুলাই ডিজিএফআই আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য চাপপ্রয়োগ করে।
তিনি বলেন, ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়, যার ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসেন। সেই সময় আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং তারা গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। নাহিদ জানান, ওইদিন সারা দেশে বহু ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন এবং রাতে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯ জুলাইও পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়, ফলে ওইদিনও বহু মানুষ হতাহত হন।গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন
প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এই মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে।