সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৪:১৪ পিএম
চাঁদ ধীরে ধীরে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১.৫ ইঞ্চি (৩.৮ সেন্টিমিটার) হারে। এই পরিবর্তন অত্যন্ত ধীর হলেও, বিজ্ঞানীরা অত্যাধুনিক লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি নিখুঁতভাবে পরিমাপ করতে সক্ষম হয়েছেন। চাঁদে বসানো আয়নায় লেজার রশ্মি পাঠিয়ে ফিরে আসার সময় পরিমাপ করে এই দূরত্ব বৃদ্ধির হার নির্ণয় করা হয়।
যে কারণে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ:
এর মূল কারণ হলো জোয়ার-ভাটা (Tidal effect)। চাঁদের মহাকর্ষ বল পৃথিবীর দুই পাশে দুটি জোয়ারের স্ফীতি তৈরি করে। পৃথিবী তার নিজের অক্ষের চারপাশে ঘোরার কারণে এই জোয়ারের স্ফীতি চাঁদের আকর্ষণের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকে। এই এগিয়ে থাকা স্ফীতি চাঁদকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়, যা চাঁদের গতি বাড়িয়ে দেয়।
কোনো বস্তুর গতি বাড়লে তা তার কক্ষপথকে প্রসারিত করে। ফলে, চাঁদের কক্ষপথ দীর্ঘ হয় এবং পৃথিবী থেকে এর দূরত্বও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।এই প্রক্রিয়ায় চাঁদের গতি বাড়ানোর জন্য পৃথিবীকেই শক্তি খরচ করতে হয়। এর ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি কিছুটা কমে যায়, যার কারণে দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ২.৩ মিলিসেকেন্ড করে বাড়ছে।
ঐতিহাসিক ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি:
প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে চাঁদ যখন তৈরি হয়েছিল, তখন এটি পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি ছিল। সেই সময় দিন মাত্র ২৩ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের হতো। প্রাচীন জীবাশ্ম যেমন ৭ কোটি বছর আগের ঝিনুকের খোলের বৃদ্ধি দেখে বিজ্ঞানীরা এর প্রমাণ পেয়েছেন।তবে, এই দূরত্ব বৃদ্ধি নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই প্রক্রিয়াটি এত ধীরে ঘটছে যে আগামী কয়েক কোটি বছরেও এর কোনো বড় প্রভাব দেখা যাবে না।
আগামী ১০০ কোটি বছরের মধ্যে সূর্যের তাপে সমুদ্র শুকিয়ে গেলে জোয়ার-ভাটার প্রভাব কমে যাবে এবং চাঁদের দূরে সরে যাওয়ার গতিও থেমে যাবে। এরপর কয়েক বিলিয়ন বছর পর যখন সূর্য একটি "রেড জায়ান্ট" নক্ষত্রে পরিণত হবে, তখন পৃথিবী ও চাঁদ উভয়ই ধ্বংস হয়ে যাবে।