বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২

দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ, পৃথিবী কি বিপদে পড়ছে?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ, পৃথিবী কি বিপদে পড়ছে?

ছবি - সংগৃহীত

প্রতি বছর পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে আমাদের একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। তবে এর গতি খুবই ধীর, মাত্র ৪ সেন্টিমিটার। এই ধীরগতির প্রক্রিয়া কোটি কোটি বছর ধরে চলছে এবং এর পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক কারণ। যদিও এই মুহূর্তে কোনো ধরনের বিপদের আশঙ্কা নেই, তবুও বিজ্ঞানীরা মনে করেন ।

বহুদূর ভবিষ্যতে চাঁদ অনেক দূরে সরে যাবে, যা পৃথিবীতে প্রাণ ধারণের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করে তুলতে পারে। কারণ, পৃথিবীতে জীবনের টিকে থাকার জন্য চাঁদের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী স্টিফেন ডিকারবি জানান, জোয়ার-ভাটার শক্তি এবং কৌণিক ভরবেগের কারণেই চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সূর্য ও চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটা হয়।

চাঁদের আকর্ষণশক্তির কারণে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের দিকে থাকে, সেখানে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে এই জোয়ারের স্ফীতি চাঁদের আকর্ষণের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকে। এতে চাঁদ অতিরিক্ত শক্তি পেয়ে তার কক্ষপথ প্রসারিত করে, যার ফলে এটি পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়।

একই সময়ে, চাঁদ পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির ওপর এক ধরনের ব্রেক তৈরি করে, ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। এর কারণে দিনের দৈর্ঘ্য প্রতি শতাব্দীতে প্রায় ২.৩ মিলিসেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এই পুরো প্রক্রিয়াটি পদার্থবিজ্ঞানের কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতির ওপর নির্ভরশীল। এই নীতি অনুযায়ী, কোনো আবদ্ধ সিস্টেমে মোট কৌণিক ভরবেগ স্থির থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কৌণিক ভরবেগ কমে গেলে চাঁদের কক্ষপথের কৌণিক ভরবেগ বেড়ে যায়, যা চাঁদকে আরও দূরে সরিয়ে নেয়।

১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে চাঁদের পৃষ্ঠে বিশেষ প্রতিফলক বসানো হয়। বিজ্ঞানীরা এই প্রতিফলক ব্যবহার করে লেজার রশ্মি পাঠিয়ে চাঁদের সঠিক দূরত্ব পরিমাপ করেন। এই পরিমাপ থেকেই চাঁদ দূরে সরে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) বিজ্ঞানী ডেভিড স্টিভেনসন বলেছেন, চাঁদের এই দূরে সরে যাওয়া আমাদের সৌরজগতের ইতিহাস এবং পৃথিবী-চাঁদের সম্পর্ক বুঝতে সাহায্য করে। এই ধীর প্রক্রিয়া থেকে আমরা জানতে পারি, অতীতে পৃথিবীর দিনগুলো আরও ছোট ছিল এবং ভবিষ্যতে তা আরও বড় হবে।