সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫, ০৭:১৪ পিএম
২০২৪ সালের জুলাই মাসের ছাত্র আন্দোলনকে ‘পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত দমন-পীড়ন’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও সেই আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি মামলায় ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে তিনি এই আংশিক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে আখ্যা দেন। একইসঙ্গে তিনি কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। নাহিদের মতে, এই বক্তব্য সরকারের দমন-পীড়নমূলক কার্যক্রমকে এক ধরনের ‘বৈধতা’ দিয়েছিল, যার মাধ্যমে আন্দোলনের যৌক্তিকতা খাটো করার চেষ্টা করা হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এই মন্তব্যের পর সারাদেশের শিক্ষার্থীরা অপমানিত হয়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। নাহিদ অভিযোগ করেন, ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয় এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা করা হয়।
১৬ জুলাই আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ছয়জনের শহিদ হওয়ার পরদিন ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজা ও কফিন মিছিলে হামলা চালানো হয়। একই দিনে হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়।
১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর ডাক দেওয়ার পর দেশের সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। বিশেষ করে মাদ্রাসা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেন। নাহিদ ইসলাম আরও অভিযোগ করেন, পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় এবং তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাও হামলা চালায়, যার ফলে বহু মানুষ শহিদ ও আহত হন।
তিনি দাবি করেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আপোস না করলে দমন-পীড়ন আরও বাড়বে বলে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল, কিন্তু আন্দোলনকারীরা রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে কোনো সংলাপে যেতে রাজি হননি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, তৎকালীন সরকার ছিল ‘ফ্যাসিবাদী’। তারা তিনবার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছে। তিনি দাবি করেন, ২০১৮ সাল থেকেই তাদের সন্দেহ ছিল যে শেখ হাসিনা সরকার প্রকৃতপক্ষে কোটা সংস্কার বা বাতিল করতে চায়নি, বরং সময়-সুযোগ বুঝে তা আবার ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল।