বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

জামায়াত চাঁদাবাজি করে না কেন? সমাবেশে কলেজছাত্রের বক্তব্যে তোলপাড়!

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০২:২৯ পিএম

জামায়াত চাঁদাবাজি করে না কেন? সমাবেশে কলেজছাত্রের বক্তব্যে তোলপাড়!

ছবি- সংগৃহীত

রাজধানীর রাজপথে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে এক কলেজছাত্রের দেওয়া বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা নৌবাহিনী কলেজের এই ছাত্র, যার নাম মোহাম্মদ পাওয়াজ, তার বক্তব্যে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শ এবং জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম নিয়ে নিজস্ব বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

বক্তব্যের শুরুতেই তিনি একটি মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেন—কেন জামায়াতে ইসলামী চাঁদাবাজি বা লুটতরাজের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত নয়? তার মতে, এর মূল কারণ দলটির আদর্শ এবং অর্থনৈতিক কাঠামো। তিনি দাবি করেন, দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যক্রম মূলত নেতা-কেন্দ্রিক এবং স্লোগান-সর্বস্ব। তাদের নেতাকর্মীরা নেতাদের পেছনে ঘোরে এবং ‘জয় বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়। কিন্তু গত ৫৩ বছরে এসব দল কোনো উল্লেখযোগ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

এর বিপরীতে, জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ সম্পূর্ণ ভিন্ন বলে তিনি উল্লেখ করেন। তার ভাষ্যমতে, জামায়াত নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরিতে বিশ্বাসী। তিনি বলেন, গত ৫৩ বছরে জামায়াত অসংখ্য হাসপাতাল, ব্যাংকিং সেক্টরসহ নানা কর্মসংস্থান তৈরি করেছে। ফলে তাদের নেতাকর্মীদের পড়াশোনা শেষে চাকরির জন্য অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় না; বরং দলের প্রতিষ্ঠানগুলোতেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। একারণে তাদের চাঁদাবাজি করার কোনো প্রয়োজনই পড়ে না।

তিনি একটি উদাহরণ টেনে বলেন, বরিশালের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর জামায়াত তার পড়াশোনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেয়। তাকে শিক্ষিত করে, এমনকি দেশের বাইরে পাঠিয়ে ডাক্তার বানিয়ে ফিরিয়ে আনে। সেই ব্যক্তি এখন একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে তার আয়ের ৫০ শতাংশ সেচ্ছায় দলকে দান করেন। পাওয়াজের মতে, জামায়াতের নেতাকর্মীরা দলকে কিছু দেওয়ার মানসিকতা রাখে, দল থেকে নেওয়ার নয়। তাদের অনুদানের টাকাতেই অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচ চালানো হয়।

তিনি আরও বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীদের একটি কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাদের প্রতি মাসে দুটি বই পড়ে পরীক্ষা দিতে হয়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সঙ্গে আদায় করার হিসাব রাখতে হয়। তার প্রশ্ন, যে ব্যক্তি এতো কষ্ট ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে একটি দলে টিকে থাকে, তার মধ্যে নৈতিকতা থাকাটাই স্বাভাবিক। এমন একজন ব্যক্তি স্বার্থের জন্য রাজনীতি করতে পারে না।

মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকা নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে ওঠা ‘রাজাকার’ বা ‘আলবদর’ অভিযোগের বিষয়েও কথা বলেন এই তরুণ। তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, জামায়াত যদি আসলেই রাজাকার হয়ে থাকে, তবে শেখ মুজিবুর রহমান বা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে কেন তাদের বিচার করা হয়নি? তার অভিযোগ, শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে জামায়াতের হুজুরের কাছে দোয়া চাইতে গিয়েছিলেন এবং নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তাদের রাজাকার আখ্যা দিয়েছেন।

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে 'ভারতের দালাল' হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। তার মতে, একটি দল এখন ভারতে এবং অন্যটির নেতা লন্ডনে অবস্থান করছেন। কিন্তু জামায়াত দেশ ছেড়ে যায়নি, বরং এর নেতারা "ফাঁসির মঞ্চে হাসি মুখে দাঁড়িয়েছে", কারণ তারা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পায় না।

তিনি আরও বলেন, ভারত ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে প্লাবিত করছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার ইলিশ মাছ নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু দেশের দলগুলো এর প্রতিবাদ করছে না। তিনি বিএনপিকেও ভারতের দালাল বলে উল্লেখ করে প্রশ্ন তোলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশে না থাকলেও বিএনপির নেতা কে? মির্জা ফখরুল। কিন্তু গত তিন মাসে তাকে কোনো টক শো বা মিডিয়ায় দেখা যায়নি। তার বদলে বিএনপির হয়ে কথা বলছেন সালাউদ্দিন সাহেব, যিনি গত দশ বছর ভারতে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছেন। তার মতে, বিএনপিতে যারা ভারতের বিরোধিতা করে, যেমন ইলিয়াস আলী বা বাবর, তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে "দুই সাপের এক বিষ" বলে মন্তব্য করেন।

নারীর অধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীরা অধিকার পাবে না—এই ধারণা ভুল। তার মতে, ইরান একটি ইসলামিক রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও সেখানকার নারীরা উন্নত এবং কর্মসংস্থানে নিযুক্ত। জামায়াত চায় নারীরা পর্দা মেনে শালীনতার সাথে তাদের অধিকার ভোগ করুক, যাতে তাদের দিকে কেউ আড়চোখে তাকাতে না পারে। তার মতে, বর্তমানে নারীরা উন্নয়নের নামে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে। এই অশ্লীলতা থেকে মুক্তি পেতে জামায়াতের বিকল্প নেই।