বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২

নবীজির আগমনে কেটে গেল অন্ধকার, ফুটলো চিরসত্যের আলো

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১২:২১ পিএম

নবীজির আগমনে কেটে গেল অন্ধকার, ফুটলো চিরসত্যের আলো

ছবি- সংগৃহীত

আরবের আকাশে যখন ভোরের আলো ফোটেনি, তখন শুধু রাতের অন্ধকার নয়, মানুষের হৃদয়েও নেমে এসেছিল এক গাঢ় আঁধার। সেই সময়ে গোত্রের অহংকার, শক্তিশালী কর্তৃক দুর্বলকে নির্যাতন, দাস-প্রথা, এবং নারী অবমাননার মতো অমানবিক প্রথাগুলো ছিল সমাজের নিত্যদিনের চিত্র। মানুষ মূর্তিপূজায় মগ্ন ছিল, কিন্তু মানবতার সামনে নত হতে ভুলে গিয়েছিল। ঠিক এই সময়ে, ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের রবিউল আউয়ালের এক ভোরে, মক্কার সম্মানিত কুরাইশ বংশে জন্ম নিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তার আগমন যেন শুধু একটি শিশুর জন্ম নয়, বরং অন্ধকারকে দূর করে এক নতুন সূর্যের উদয়।

বিশ্বনবীর জন্মপূর্ব জীবন থেকে শুরু করে তার নবুয়ত প্রাপ্তি পর্যন্ত এক অনন্য অধ্যায়। জন্মের আগেই পিতাকে হারিয়ে এবং ছয় বছর বয়সে মাতৃহীন হয়ে তিনি এতিমের নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন। তবে এই নিঃসঙ্গতা তাকে আরও মানবিক ও মমতাময় করে তোলে। তার সততা এতটাই দীপ্তিমান ছিল যে, মক্কার মানুষ তাকে ‘আল-আমিন’ বা ‘বিশ্বস্ত’ উপাধিতে ভূষিত করে। তার যুবক বয়স থেকে তিনি উপলব্ধি করতে থাকেন সমাজের অন্যায়, অবিচার ও অমানবিকতা। এই চিন্তা তাকে মক্কার উপকণ্ঠের হেরা গুহায় নিয়ে যায়, যেখানে তিনি নির্জনে স্রষ্টার ইবাদত ও ধ্যানমগ্ন হতেন। সেখানেই এক রাতে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-এর মাধ্যমে তার কাছে প্রথম ঐশী বাণী ‘ইক্‌রা’ (পড়ো) আসে, যা বিশ্ব ইতিহাসের গতিপথ পাল্টে দেয়।

নবুয়ত পাওয়ার পর বিশ্বনবীর উপর নেমে আসে সীমাহীন নির্যাতন। মক্কার তৎকালীন ক্ষমতাধর শ্রেণি তার সত্যের বার্তাকে মেনে নিতে পারেনি। দাস বিলাল (রা.)-কে উত্তপ্ত মরুভূমিতে নির্যাতন করা হয়, সুমাইয়া (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। এমনকি তায়েফে তাকে পাথর ছুঁড়ে রক্তাক্ত করা হয়। তবুও তিনি প্রতিশোধের পরিবর্তে ক্ষমা, ঘৃণা নয় বরং দয়া ও ভালোবাসা দিয়ে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তার জীবনের এই দিকটিই প্রমাণ করে যে তিনি কতটা ক্ষমাশীল ও দয়ার প্রতিমূর্তি ছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিনেও তিনি তার শত্রুদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ নেননি, বরং তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে মহত্ত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

নবীজির জীবন কেবল ব্যক্তিগত জীবন নয়, বরং রাষ্ট্রীয় জীবনের এক অসাধারণ উদাহরণ। মদিনায় হিজরতের পর তিনি একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান অধিকার ও নিরাপত্তা লাভ করেছিল। তিনি রাজকীয় জীবন বর্জন করে সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতেন, দরিদ্রের সঙ্গে একই আসনে বসতেন এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। তার জীবন ছিল ন্যায়ের প্রতীক, যেখানে ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ, প্রভু-দাস—সবার জন্য ছিল মর্যাদার নিশ্চয়তা। তার প্রতিষ্ঠিত সমাজ ব্যবস্থায় নারী তার প্রকৃত সম্মান ফিরে পেয়েছিল এবং দাসেরা মানুষের মর্যাদা লাভ করেছিল। মিলাদুন্নবী সেই মহান ব্যক্তিত্বের জন্মের স্মৃতিকে ধারণ করে, যিনি আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে ক্ষমা ও দয়া দিয়ে একটি সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা যায়। এই বিভেদ ও অস্থিরতার সময়ে তার জীবন ও আদর্শই হতে পারে আমাদের জন্য সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক পথনির্দেশ।