সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম
ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসে কিছু নাম তাদের কর্ম ও ত্যাগের কারণে অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর, শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, চরমোনাই পীর আল্লামা সৈয়দ ফজলুল করীম এবং মুফতি ফজলুল হক আমিনী—এই চার ব্যক্তিত্বকে ইসলামী আন্দোলনের চার উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারা প্রত্যেকেই নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন ইসলামের শিক্ষা, দাওয়াত ও বাংলাদেশে ইসলামী রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য।
আশির দশকে বাংলাদেশের ইসলামী রাজনীতির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)। তিনি প্রচলিত রাজনীতির বিপরীতে ‘তওবার রাজনীতি’র আহ্বান জানান। নৈতিকতা ও সততার ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য ১৯৮১ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘খেলাফত আন্দোলন’। একই বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বটগাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ব্যাপক সাড়া ফেলেন। তিনি ১৯৮২ সালে ইরান ও ইরাকের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইমাম খামেনি ও সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেন। ১৯৮৭ সালের ৭ মে এই মহান নেতা ইন্তেকাল করেন।
সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.) জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও আন্দোলনের এক বিরল সমন্বয় ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, যিনি দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে হাদিসের শিক্ষা ছড়িয়েছেন। ১৯৫২ সালে ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় বুখারি শরিফের পাঠদান শুরু করেন। ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস’। ১৯৯৩ সালে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ লংমার্চের নেতৃত্ব দিয়ে তিনি তার সাহসী নেতৃত্বের প্রমাণ দেন। ২০১২ সালের ৮ আগস্ট তিনি ইন্তেকাল করেন।
আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের এক অনন্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মাদ ফজলুল করীম (রহ.), যিনি চরমোনাই পীর হিসেবে পরিচিত। বাবার যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে ১৯৭৩ সালে তিনি চরমোনাই দরবারের আমিরুল মুজাহিদীনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে **‘ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন’**র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর আমির হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ২০০১ সালে ফতোয়াবিরোধী রায়ের বিরুদ্ধে তার ‘কাফনের কাপড়’ পরে আন্দোলন দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০০৬ সালের ২৫ নভেম্বর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহ.) ছিলেন একজন প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি একজন আইনজ্ঞ হিসেবে ইসলামি আইন ও শিক্ষানীতি নিয়ে কাজ করেছেন। ১৯৮০-এর দশকে খেলাফত আন্দোলনের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। পরবর্তীতে তিনি ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও হাইকোর্টের ফতোয়া-সংক্রান্ত রায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সক্রিয়। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।