সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৯:৫১ এএম
ইসলামের আবির্ভাবের আগে মক্কায় বিপদের কোনো খবর থাকলে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার দিয়ে সবাইকে আহ্বান করা হতো। এই প্রথা অনুযায়ী, একদিন রসুলুল্লাহ (সা.) ছাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে সবাইকে সমবেত হওয়ার জন্য ডাক দিলেন। কুরাইশ বংশের সব গোত্রের লোক সেখানে দ্রুত ছুটে আসে। তাদের উদ্দেশে তিনি তাওহিদ, রিসালাত ও আখেরাতের ওপর ইমান আনার আহ্বান জানান। তিনি তাদের কাছে প্রশ্ন রাখলেন, "যদি আমি বলি, এই পাহাড়ের অপর পাশে একদল শক্তিশালী শত্রু সৈন্য তোমাদের ওপর হামলার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহলে তোমরা কি বিশ্বাস করবে?" সবাই সমস্বরে বলল, "অবশ্যই করব। কারণ আমরা আপনার কাছ থেকে সত্য ছাড়া অন্য কিছু পাইনি।" তখন রসুল (সা.) বললেন, "আমি কিয়ামতের কঠিন আজাব সম্পর্কে তোমাদের কাছে ভয় প্রদর্শনকারী হিসেবে আগমন করেছি।"
এরপর তিনি আবেগভরে একেকটি গোত্রের নাম ধরে বলতে থাকলেন, "হে কুরাইশগণ, তোমরা নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু হাশেম! হে বনু আবদুল মুত্তালিব! তোমরা নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও!" এমনকি তিনি ব্যক্তিগতভাবে চাচা আবু লাহাব এবং নিজের কন্যা ফাতেমাসহ প্রত্যেককে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচানোর আহ্বান জানান। রসুল (সা.)-এর হৃদয়কাড়া এই আবেদন আবু লাহাবের অন্তরে কোনো দাগ কাটতে পারেনি। সে মুখের ওপর বলে দিল, "তোমার ওপর ধ্বংস আসুক! এজন্য তুমি আমাদের জড়ো করেছ?" এর পরিপ্রেক্ষিতেই সুরা লাহাব নাজিল হয়। এই ঘটনার পর রসুল (সা.) মক্কার বাজারঘাটসহ সবখানে বিশেষ করে হজের মৌসুমে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "তোমরা বল আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে।" এই আহ্বানের পরই মুশরিকদের সঙ্গে রসুল (সা.)-এর প্রকাশ্যে বিরোধ শুরু হয়।
মুশরিকরা রসুল (সা.)-এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করে। তারা বলত, তিনি একজন কবি, বাগ্মী, এবং তার প্রচারিত ধর্ম প্রাচীন বিশ্বাস ও কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে গঠিত। তারা আরও বলত যে, তাকে জিনে ধরেছে এবং তিনি নির্বংশ। ব্যঙ্গবিদ্রুপ, ঠাট্টা-উপহাস ও গালিগালাজ করার পাশাপাশি তারা কটুতর্ক শুরু করে। তারা বলত, "তুমি যদি নবী হয়ে থাক, তাহলে এর সপক্ষে যুক্তি দেখাও।" তারা আকাশ থেকে ফেরেশতা নামিয়ে আনার দাবি করত এবং বলত, "তুমি তো আমাদের মতোই রক্তমাংসে তৈরি একজন মানুষ, তুমি কীভাবে নবী হলে?" মুশরিকরা এই দাওয়াত মেনে নিলে তাদের নেতৃত্ব ও প্রাধান্য থাকবে না বলে মনে করত। ব্যঙ্গবিদ্রুপ ও কটুতর্কের সঙ্গে সঙ্গে কুরাইশদের বিরোধিতা গুন্ডামি, সন্ত্রাসী ও হিংস্রতায় রূপ নিতে থাকে। রসুল (সা.)-এর যাতায়াতের রাস্তায় কাঁটা বিছানো হতো, নামাজের সময় হইচই করা হতো এবং সেজদার সময় তার পিঠের ওপর পশুর নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ করা হতো।
মক্কাবাসীর পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি এক বুক বেদনা নিয়ে তায়েফে গেলেন, কিন্তু সেখানেও তিনি নির্মম নির্যাতনের শিকার হলেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে হিজরতের অনুমতি পাওয়ার পর রসুল (সা.) সাহাবিদের পর্যায়ক্রমে মদিনায় হিজরতের নির্দেশ দিলেন। হিজরতের মাধ্যমে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র মাদানি জীবনের শুভসূচনা হয় এবং ইসলাম পৃথিবীর বুকে বিজয়ী রূপে আত্মপ্রকাশ করে।