শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২
সিরাত

মহানবী (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়নের অপরিহার্যতা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ১১:৪৮ এএম

মহানবী (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়নের অপরিহার্যতা

ছবি - সংগৃহীত

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনচরিত, যা আরবিতে ‘সিরাত’ নামে পরিচিত, প্রতিটি মুসলমানের জন্য এক অপরিহার্য জ্ঞান। এটি কেবল একজন মহান ব্যক্তিত্বের জীবনকাহিনী নয়, বরং আল্লাহ প্রদত্ত এক আলোকবর্তিকা, যা মানবজাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ পথনির্দেশনা। তার জীবনের প্রতিটি দিক, প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি সংগ্রাম অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে লিপিবদ্ধ আছে, যা অন্য কোনো মানব ইতিহাসের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। সিরাত অধ্যয়নকে তাই কোনো বিলাসিতা হিসেবে দেখা হয় না, বরং এটি ঈমানের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

সিরাত কোরআন বোঝার অপরিহার্য মাধ্যম: পবিত্র কোরআনের বহু আয়াত নির্দিষ্ট ঘটনার প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছে। বদরের যুদ্ধ, হিজরতের কষ্ট, উহুদের পরীক্ষা বা হুদায়বিয়ার সন্ধির মতো ঘটনাগুলো সিরাতের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। সিরাত অধ্যয়ন ছাড়া এই আয়াতগুলোর গভীর অর্থ ও বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আল্লাহ নিজেই কোরআনে বলেছেন, "আমি আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের কাছে তা স্পষ্ট করে তুলে ধরেন।" (সুরা নাহল, আয়াত: ৪৪)। তাই সিরাত পাঠের মাধ্যমে আমরা কোরআনের আয়াতগুলোর বাস্তব প্রয়োগ ও প্রেক্ষাপট জানতে পারি।

রাসুল (সা.)-কে অনুসরণ করার পূর্বশর্ত: আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেন, "তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।" (সুরা আহজাব, আয়াত: ২১)। আমাদের ইবাদত, ব্যবসা, পারিবারিক সম্পর্ক, শাসননীতি—সবকিছুতেই তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। সিরাত পাঠের মাধ্যমেই সেই আদর্শগুলো আমাদের সামনে নিখুঁতভাবে উন্মোচিত হয়।

ঈমানের দৃঢ়তা ও সাহসের উৎস: মক্কার নির্যাতন, তায়েফের অপমান, উহুদের ক্ষতবিক্ষত শরীর—সিরাতের এই অধ্যায়গুলো একজন পাঠকের হৃদয়ে সাহস ও ধৈর্য্যের অনুপ্রেরণা জোগায়। যখন পাঠক মহানবী (সা.)-এর ত্যাগ ও আল্লাহর ওপর তাঁর নির্ভরতার কথা জানতে পারেন, তখন জীবনের সকল বিপদ-আপদ তার কাছে ক্ষুদ্র মনে হয়। সিরাত প্রতিটি অধ্যায়েই ঈমানকে নবায়ন করে এবং আশার আলো দেখায়।

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের রূপরেখা: রাসুল (সা.) কেবল একজন আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, বিচারক, সেনাপতি ও কূটনীতিক। মদিনার সনদ ছিল মানবাধিকার ও সামাজিক সমতার এক অনন্য উদাহরণ। তাঁর শাসননীতি, অর্থনীতি ও যুদ্ধনীতি আধুনিক বিশ্বের জন্যও এক আদর্শ। তাই রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো বিষয়ে গবেষণা করতে হলে সিরাত পাঠ অপরিহার্য।

রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি: রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা, সন্তান ও সমগ্র মানবজাতির চেয়েও বেশি প্রিয় হই।" (বুখারি, হাদিস: ১৫)। এই ভালোবাসা শুধুমাত্র কথার কথা নয়। সিরাত অধ্যয়নের মাধ্যমে তাঁর প্রতিটি আচরণ, দোয়া, হাসি-কান্না, এবং সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানা যায়, যা পাঠকের হৃদয়ে প্রকৃত ভালোবাসা জন্মায়।

মহানবী (সা.)-এর জীবন শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবতার জন্য একটি সর্বজনীন শিক্ষা। তিনি শিখিয়েছেন কিভাবে শত্রুকে ক্ষমা করতে হয়, কিভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হয় এবং কিভাবে নারীর সম্মান রক্ষা করতে হয়। এটি প্রমাণ করে যে ইসলাম কেবল একটি ধর্ম নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহ আমাদের সকলকে সিরাতের আলোয় জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন। আমিন।