জুলাই ৩১, ২০২৫, ১২:৫৫ পিএম
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় অসময়ে তরমুজ চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন মো. আবুল বাসার নামে এক কৃষক। বর্ষাকালের মতো কঠিন মৌসুমে সফলভাবে তরমুজ উৎপাদন করে এখন আলোচনার কেন্দ্রে তিনি। তুলনামূলক কম খরচ, বেশি ফলন এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় এই চাষাবাদ তাকে এনে দিয়েছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। আর এতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন আশপাশের অনেক কৃষকও।
মো. আবুল বাসার সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামের কৃষক আবুল খায়েরের ছেলে। কৃষির প্রতি দীর্ঘদিনের আগ্রহ থাকলেও এবারই প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে তরমুজ চাষ করেন তিনি। মাত্র ১৫ শতক জমিতে শশার পাশাপাশি মাচার ওপরে ‘বাংলালিংক’ জাতের তরমুজের চাষ করেন। বিশেষ কৌশল হিসেবে মাচার নিচে করেছেন মাছ চাষ। একইসঙ্গে উৎপাদনের ফলে খরচ সাশ্রয় হয়েছে অনেকটাই।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা, যেখানে অসংখ্য ছোট-বড় তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজের পাশাপাশি রয়েছে শশা গাছ।
কৃষক মো. আবুল বাসার বলেন, "পুরো ব্যবস্থাপনায় খরচ হয়েছে মাত্র ২০ হাজার টাকা। আর আড়াই মাসেই গাছে এসেছে বাম্পার ফলন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ভালো দাম দিচ্ছেন। ফলন ও দামে অনুকূলে থাকায় আমি আশা করছি অন্তত ১ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে এবার।"
আবুল বাসার আরও বলেন, "আমি কখনো বর্ষাকালে তরমুজ চাষ করিনি। তাই বর্ষাকালে তরমুজ চাষ একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে সঠিক পরিকল্পনা, পরিচর্যা আর ভাগ্য অনুকূলে থাকায় এবার ভালো ফলন পেয়েছি। মাচায় চাষ করায় জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েনি। ফলন দেখে অনেকেই এখন এই পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী।"
স্থানীয় ব্যবসায়ী সিরাজ উদ্দিন বলেন, "অল্প জমিতে বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক আবুল বাসার ভাইয়ের আনন্দের শেষ নাই। তার সফলতা দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। আমাদের সড়কগুলোর বেহাল দশা। শশা চাষ করলে নিয়মিত বাজারে পাঠাতে হয় কিন্তু তরমুজ চাষ করলে ১৫ দিনে একবার বাজারে পাঠাতে হয়। এতে কৃষকের খরচ কমে আসে এবং ভালো দাম পায়।" আবুল বাসারের এমন সাফল্য শুধু তার পরিবারের মুখেই হাসি ফোটায়নি, আশেপাশের কৃষকদের মাঝেও এনেছে নতুন সম্ভাবনার আলো।
সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হারুন অর রশিদ বলেন, "আবুল বাসারের এ ধরনের উদ্যোগ আমাদের কৃষির নতুন সম্ভাবনার দিক দেখাচ্ছে। বর্ষাকালে মাচায় তরমুজ চাষ একটি উদ্ভাবনী পদ্ধতি। এতে করে অনাবাদি কিংবা জলাবদ্ধ এলাকার জমিও ব্যবহার করা সম্ভব।" তিনি আরও জানান, উপজেলায় মোট ১৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। স্থানীয় বাজারে এখন তরমুজের চাহিদা বেশি, কারণ এটি সাধারণত গ্রীষ্মকালীন ফল হলেও এখন বর্ষাকালে পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এর দামও ভালো মিলছে।
আপনার মতামত লিখুন: