জুলাই ২২, ২০২৫, ০৬:১৩ পিএম
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামকে আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই, ২০২৫) বিকেলে রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে। নগরের সপুরা গোরস্তানে জানাজা শেষে তাকে সমাহিত করা হয়। এ সময় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেল সাড়ে চারটায় রাজশাহী জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে তৌকির ইসলামের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, সাবেক সিটি মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেনসহ সেনা ও বিমানবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আত্মীয়স্বজন এবং সাধারণ মানুষ অংশ নেন।
জানাজার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে শোনানো হয়। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম ও মামা মতিউর রহমান। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে তহুরুল ইসলাম বলেন, "আমি সেই হতভাগ্য পিতা, যে নিজের সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি।" ডুকরে কেঁদে উঠে তিনি সন্তানের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। পাশাপাশি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের সবার জন্য দোয়া চান তৌকির ইসলামের বাবা।
এর আগে বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে তৌকিরের মরদেহ রাজশাহী সেনানিবাসে আনা হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে সেনানিবাসের পাশেই নগরের উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত তাদের ভাড়া বাসায় তৌকিরের মরদেহ নেওয়া হয়। এ সময় অসংখ্য মানুষ বাড়ির সামনে ভিড় করেন। বাড়ির সামনে কিছু সময় মরদেহবাহী ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়। এরপর জানাজার জন্য মরদেহ জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়।
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের বাবা তহুরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে হলেও, গত ২৫ বছর ধরে তারা রাজশাহী শহরে বাস করছেন। একমাত্র ছেলে তৌকিরের বেড়ে ওঠা রাজশাহীতেই। তৌকির রাজশাহীর ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০১৪ সালে এসএসসি ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাস করে তিনি বিমানবাহিনীতে যোগ দেন।
বছরখানেক আগে তৌকির বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তার স্ত্রী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। প্রশিক্ষণের শেষ ধাপে গত সোমবার (২১ জুলাই) তৌকির একা (সলো) যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন। একজন বৈমানিকের জীবনে এটি একটি বিশেষ দিন হিসেবে বিবেচিত হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সেদিনই তার বিমানটি রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে তৌকির নিজে এবং স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এখন পর্যন্ত মোট ৩২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
আপনার মতামত লিখুন: