নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ৭, ২০২৫, ১২:০০ এএম
পবিত্র ঈদ-উল-আযহা মানেই ত্যাগ, উৎসর্গ এবং ভাগ করে নেওয়ার উৎসব। এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি দেন এবং সেই মাংস আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব-দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। তবে এই উৎসবের সার্থকতা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সমাজের অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর মুখেও হাসি ফোটানো যায়। ঠিক এমনই এক মহৎ ও মানবিক উদ্যোগের সাক্ষী হলো দিনাজপুরের বীরগঞ্জবাসী।
ঈদের দিনে যখন সবাই নিজ পরিবার নিয়ে ব্যস্ত, তখন দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ- কাহারোল) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা জনাব মোঃ মতিউর রহমান এক ব্যতিক্রমী আয়োজন করেন। তিনি বীরগন্জ শালবন মিলনায়তনে এলাকার কিছু পঙ্গু, অসহায় এবং ইয়াতিম ব্যক্তিদের নিয়ে একসাথে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পবিত্র ঈদ-উল-আযহার দিন, বীরগঞ্জ শালবন মিলনায়তনের চিত্রটি ছিল অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আলাদা। এখানে কোনো রাজনৈতিক সভা বা জমকালো আয়োজন ছিল না; ছিল কেবলই ভালোবাসা, সহমর্মিতা আর একসাথে খাওয়ার আনন্দ। এই আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন এলাকার অসহায়, শারীরিকভাবে অক্ষম এবং পিতৃ-মাতৃহীন ইয়াতিম ব্যক্তিরা।
জনাব মোঃ মতিউর রহমানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষ অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজে উপস্থিত থেকে প্রত্যেকের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন, তাদের খোঁজখবর নেন এবং নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করে তাদের আপ্যায়ন করেন। এই দৃশ্যটি উপস্থিত সকলের মনে এক গভীর দাগ কাটে। এটি শুধুমাত্র একটি মধ্যাহ্নভোজ ছিল না, বরং ছিল সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং انسانیتবোধের এক চমৎকার প্রতিফলন।
এই মহৎ উদ্যোগের পেছনের মানুষটি সম্পর্কে জানা আবশ্যক। বীরগঞ্জ- কাহারোল) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা জনাব মোঃ মতিউর রহমান এলাকার একজন পরিচিত মুখ। তার রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও তিনি একজন সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত।
ছাত্র রাজনীতির অভিজ্ঞতা: সাবেক এই ছাত্রনেতা তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের অধিকার ও দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তার নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতা তাকে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি এনে দিয়েছে।
সংসদীয় আসনের প্রার্থী: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রত্যাশা করছেন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করছেন।
সামাজিক কর্মকাণ্ড: রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র প্রদান এবং বিভিন্ন দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো কর্মকাণ্ডে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। ঈদের দিনের এই আয়োজন তারই ধারাবাহিকতার একটি অংশ।
জনাব মতিউর রহমানের এই উদ্যোগটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। ঈদের দিনে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশটিকে মনে রাখা এবং তাদের সাথে উৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া ইসলামের মূল শিক্ষারই অংশ। জনাব মতিউর রহমান এই কাজটি করে প্রমাণ করেছেন যে, তার কার্যক্রম শুধুমাত্র রাজনৈতিক মঞ্চে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর গভীরে একটি মানবিক আবেদন রয়েছে। এটি অসহায় মানুষগুলোকে বুঝিয়ে দেয় যে, তারা একা নয়; সমাজ এবং সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের পাশে আছে।
অনেক সময় পঙ্গু, অসহায় বা ইয়াতিম ব্যক্তিরা সামাজিক উৎসবগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাদের নিয়ে এমন একটি আয়োজন তাদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে সহায়তা করে। তারা নিজেদের সমাজেরই একটি অংশ হিসেবে ভাবতে শেখে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এ ধরনের উদ্যোগ একজন নেতাকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে যায়। বীরগঞ্জ- কাহারোল) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা জনাব মোঃ মতিউর রহমান এই আয়োজনের মাধ্যমে এলাকার ভোটারদের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। এটি দেখায় যে, তিনি শুধুমাত্র ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন, বরং জনগণের প্রকৃত সেবক হতে চান। এমন কার্যক্রম তার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া অসহায় ব্যক্তিরা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তাদের মতে, ঈদের দিনে কেউ যে তাদের এভাবে মনে করে একসাথে খাওয়ার আয়োজন করবে, তা ছিল তাদের কল্পনার বাইরে।
একজন বয়স্ক ব্যক্তি বলেন, "বাবা, ঈদের দিনে কেউ তো আমাদের খোঁজ নেয় না। মতিউর রহমান সাহেব আমাদের ডেকে এনে যেভাবে যত্ন করে খাওয়ালেন, তাতে মনে হলো আমরাও কারো পরিবারের অংশ। আল্লাহ তার ভালো করুক।"
একজন ইয়াতিম কিশোর জানায়, "আজ খুব ভালো লাগছে। সবাই মিলে একসাথে খেলাম। মনে রাখার মতো একটি দিন।"
এই সাধারণ কথাগুলোই এই আয়োজনের সার্থকতা প্রমাণ করে।
রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত জনগণের সেবা করা। যখন একজন রাজনৈতিক নেতা তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেই সেবার নজির স্থাপন করেন, তখন তা সকলের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠে। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার দিনে বীরগঞ্জ- কাহারোল) আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা জনাব মোঃ মতিউর রহমান যে মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।
এআই দিয়ে তৈরি এইচএসসি পরীক্ষার মুহূর্ত।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনা করা হলে সেখানে জনবল, অস্ত্রশস্ত্র, বাজেট, পারমাণবিক ক্ষমতা ও কৌশলগত নীতি–আদর্শের এক জটিল হিসাব–নিকাশ প্রতিফলিত হয়। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আছে। এ সময়ে একাধিক যুদ্ধে জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে তাদের। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশ উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তিও বজায় রেখে চলেছে।
গত মঙ্গলবার ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ওই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এ হামলায় পাকিস্তানের মদদ থাকার অভিযোগ তুলে ভারত দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তানও।
এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান সামরিকভাবেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে—এ আশঙ্কা অনেকের। প্রাসঙ্গিকভাবে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।
‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে করা এ প্রতিবেদন ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:
সামগ্রিক সামরিক র্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক
‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।
র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।
সামরিক–বেসামরিক জনশক্তি
প্রচলিত যুদ্ধে জনবল গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ভারত ও পাকিস্তানের জন্যও তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশাল জনসংখ্যা ও স্থলবাহিনীর ওপর উভয় দেশেরই নির্ভরতা রয়েছে।
ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি (বিশ্বে দ্বিতীয়)। সক্রিয় জনশক্তি ৬৬ কোটি ২০ লাখ। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।
অন্যদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ২০ লাখ (বিশ্বে পঞ্চম)। সক্রিয় জনবল ১০ কোটি ৮০ লাখ। সক্রিয় সেনা ৬ লাখ ৫৪ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। রিজার্ভ সেনা ৬ লাখ ৫০ হাজার। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য জিএফপিতে স্পষ্টভাবে পরিমাপ করা হয়নি, তবে উল্লেখযোগ্য (রেঞ্জার্স ও ফ্রন্টিয়ার কোরসহ)। মোট সামরিক শক্তি ১৭ লাখ (সক্রিয়, রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনী)।
ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনীও বড়। পাকিস্তান যদিও কম জনবল নিয়ে কাজ করে, তবে তাদের মধ্যে ‘মুজাহিদ’–এর মতো আইএসআই–নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত বাহিনীগুলো রয়েছে।
প্রতিরক্ষা বাজেট
ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।
ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।
স্থলবাহিনী
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। দেশ দুটির মধ্যে ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। দুদেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ঘরানার যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে।
ভারতের ট্যাংক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।
পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো।
ট্যাংক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও ট্যাংকবহর প্রতিযোগিতামূলক। এ বহর চীনের ভিটি–৪–এর মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা। রয়েছে এম১১৩ ও আল–ফাহাদের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা স্থল সমরযান।
বিমানবাহিনী
আধুনিক যুদ্ধে, বিশেষত দ্রুত সাড়া দেওয়া ও নির্ভুল আক্রমণের জন্য বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস–৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি)’ ব্যবস্থা।
পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ–১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার (এএইচ–১এফ কোবরাসহ)। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।
ভারতের বিমানবহর আকারে বড় ও বৈচিত্র্যময়; তবে স্কোয়াড্রনের ঘাটতি আছে। পাকিস্তানের বিমানবহর তুলনামূলক ছোট হলেও তার আধুনিকায়ন হচ্ছে। পাকিস্তানের এইডব্লিউঅ্যান্ডসি–সুবিধা বাড়তি নজরদারিতে ব্যবহার করা হয়।
নৌবাহিনী
ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় ও আরব সাগরে পাকিস্তানের অভিযানের জন্য নৌসক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহী রণতরি আছে ২টি। সাবমেরিন ১৮টি (পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ)। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি (নৌবাহিনীর)। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০।
পাকিস্তানের জাহাজ ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।
ভারতীয় নৌবাহিনী তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ও গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর উপযোগী। পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত ছোট নৌবাহিনী মূলত উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক অভিযানে মনোযোগ দেয়। বিমানবাহী রণতরি না থাকা ও সীমিতসংখ্যক যুদ্ধবিমানের কারণে গভীর সমুদ্র দেশটির নৌবাহিনীর অভিযান চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
পারমাণবিক সক্ষমতা
ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট। পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।
অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।
কৌশলগত জোট ও জটিল মূল্যায়ন
ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। আছে সীমিত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও।
জনবল, সামরিক ব্যয় ও প্রচলিত অন্যান্য প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরমাণু ও কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধ ভান্ডার, অপ্রতিসম যুদ্ধকৌশল ও চীনের জোরালো সমর্থন দেশটিকে এক সুবিধাজনক প্রতিরক্ষা অবস্থানে রেখেছে।
প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের আধুনিকায়নে অন্যতম বাধা তার আমলাতন্ত্র ও দ্বৈত মনোযোগ (চীন–পাকিস্তান)। পুরোনো বিমানবহরও দেশটির জন্য একটি বাধা। ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানে বেশি মনোযোগও দেশটির আরেক দুর্বলতা।
অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংগ্রাম, তুলনামূলক ছোট জনশক্তি, পুরোনো সামরিক সরঞ্জাম ও আঞ্চলিক উত্তেজনা তার সামরিক সক্ষমতায় বাধা হয়ে আছে।
আরএস
আপনার মতামত লিখুন: