সোমবার, ২১ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
অন্যান্য

ফোন স্ক্রলিংয়ের নেশা থেকে মুক্তি: বিশেষজ্ঞদের ৩ সহজ পরামর্শ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২০, ২০২৫, ০১:৫১ পিএম

ফোন স্ক্রলিংয়ের নেশা থেকে মুক্তি: বিশেষজ্ঞদের ৩ সহজ পরামর্শ

আমরা অনেকেই এখন দিনের অনেকটা সময় স্মার্টফোনে স্ক্রল করেই কাটিয়ে দেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় পছন্দের ভিডিও দেখা, বন্ধুদের ছবি বা মজার কনটেন্ট দেখতে দেখতে কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়, তা আমরা টেরই পাই না। এই প্রযুক্তি নির্ভরতা এখন অনেকের জন্য এক ধরনের নেশায় পরিণত হয়েছে। তবে এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে বিশেষজ্ঞরা কিছু কার্যকর পরামর্শ দিয়েছেন, যা বিবিসি'র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

 

যুক্তরাজ্যের লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী এইলিশ ডিউক জানান, আমরা প্রায়শই বুঝতে পারি না কখন ফোন হাতে নিই এবং স্ক্রল করতে শুরু করি। এটি এমন এক অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, যা আমরা নিজেরাও খেয়াল করি না। এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ মনে করে তারা প্রতি ১৮ মিনিটে একবার ফোন দেখে, কিন্তু বাস্তবে তারা আরও অনেক বেশি সময় ফোনে চোখ রাখে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে রয়েছে মস্তিষ্কের এক জটিল প্রক্রিয়া। আমাদের মস্তিষ্ক নতুন কিছু পেলে বা ভালো কিছু দেখলে এক ধরনের সুখানুভূতি তৈরি করে। এই অনুভূতি এতটাই শক্তিশালী যে, মস্তিষ্ক বারবার তা পেতে আগ্রহী হয়। অনেকটা চকলেট খাওয়া বা প্রিয় গান শোনার মতো। ফোনে মজার বা ভালো কিছু দেখেও একই ধরনের অনুভূতি তৈরি হয়, আর তাই আমরা বারবার স্ক্রল করতে থাকি। যদিও মস্তিষ্কের একটি অংশ আমাদের 'থামো, কাজ করো' বলে সতর্ক করে, কিন্তু বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে তা সবসময় সফল হয় না।

 

এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে বিশেষজ্ঞরা তিনটি সহজ এবং কার্যকর উপায় বাতলে দিয়েছেন:

১. ফোন থেকে কিছু সময় দূরে থাকুন: নিয়মিত ফোন থেকে বিরতি নিন। ফোন পাশে না রেখে বাইরে হাঁটতে যান, বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন বা জিমে সময় কাটান। ফোন থেকে দূরে থাকলে আপনার মস্তিষ্কও একটু বিশ্রাম পাবে এবং নতুন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারবে। এই ছোট বিরতিগুলো আপনার মস্তিষ্কের উপর ফোনের প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।

২. বাস্তব জিনিসে মন দিন: আপনি যা কিছু ফোনে করেন, চেষ্টা করুন তা ফোন ছাড়া করার। উদাহরণস্বরূপ, সময় দেখার জন্য ডিজিটাল ঘড়ির বদলে সাধারণ ঘড়ি ব্যবহার করুন, বা অনলাইনে আর্টিকেল না পড়ে কাগজের বই পড়ুন। এতে স্ক্রল করার সুযোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে। এই অভ্যাসগুলো আপনার বাস্তব জীবনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াবে এবং প্রযুক্তি নির্ভরতা কমাবে।

৩. নিজের অভ্যাস নিয়ে ভাবুন: যখনই ফোন হাতে নেবেন, নিজেকে সচেতনভাবে জিজ্ঞেস করুন—'আমি এটা এখন কেন করলাম?' সচেতনভাবে নিজের আচরণ নিয়ে ভাবতে পারলে অভ্যাস বদলানো সহজ হয়। ঠিক যেমন ক্ষুধা পেলে আমরা বুঝি খেতে হবে, তেমনি ফোন স্ক্রল করার আগেও নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন—এটা এখন দরকার কি না? এই আত্মজিজ্ঞাসা আপনাকে অপ্রয়োজনীয় স্ক্রলিং থেকে বিরত রাখতে সাহায্য করবে।

 

ফোন স্ক্রল করাটা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার, কিন্তু যদি এটি আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলে বা দৈনন্দিন কাজে বাধা দেয়, তাহলে একটু সচেতন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, ধীর ধীরে এবং সচেতনভাবে চেষ্টা করলে এই অভ্যাস বদলানো সম্ভব। এর জন্য শুধু প্রয়োজন একটু ইচ্ছাশক্তি আর সচেতনতা। আপনার জীবনকে আরও উৎপাদনশীল এবং সুসংহত করতে এই পরামর্শগুলো মেনে চলতে পারেন।