জুলাই ২৫, ২০২৫, ০১:২২ পিএম
আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে নজরদারি এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য জার্মানি এক নতুন ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি তৈরি করেছে। তারা তৈরি করেছে 'সাইবার তেলাপোকা' নামে এক বিশেষ বায়ো-রোবট, যা জীবিত পোকামাকড়ের দেহকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্ষুদ্র প্রযুক্তির সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই উদ্ভাবন যুদ্ধের কৌশল এবং গোয়েন্দা তথ্যের সংগ্রহে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর জার্মানি তার প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে বড় ধরনের বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এই বিনিয়োগের ফলেই এমন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিকাশ সম্ভব হচ্ছে, যা আগামীতে যুদ্ধের ধরনই পালটে দিতে পারে। ঐতিহ্যবাহী ড্রোন বা স্যাটেলাইটের চেয়েও ছোট, সহজে সনাক্ত করা কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে প্রবেশে সক্ষম এমন প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা থেকেই 'সাইবার তেলাপোকা'র ধারণা এসেছে।
সংবাদমাধ্যম রয়টার্স তাদের বুধবার (২৩ জুলাই) এর এক প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানিয়েছে। রয়টার্স বলছে, জার্মানির 'সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স' (Swarm Biotactics) নামক একটি কোম্পানি এই যুগান্তকারী প্রযুক্তিটি তৈরি করছে।
'সোয়ার্ম বায়োট্যাকটিক্স' এর প্রধান স্টেফান উইলহেলম এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "আমাদের বায়ো-রোবটগুলো মূলত জীবিত পোকামাকড়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা অত্যাধুনিক সেন্সর এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত।" এই তেলাপোকাগুলোর পিঠে ক্ষুদ্র ক্যামেরা, মাইক্রোফোন এবং অন্যান্য সেন্সর লাগানো থাকে। এরা শত্রুর অবস্থান, গতিবিধি এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে সেনাবাহিনীর কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
এই 'সাইবার তেলাপোকা'গুলো স্বাধীনভাবে একাকী কাজ করতে পারে, আবার প্রয়োজনে ঝাঁক বেঁধেও কাজ করতে সক্ষম। ঝাঁক বেঁধে কাজ করার সক্ষমতা তাদের তথ্য সংগ্রহের পরিধিকে আরও বাড়িয়ে দেবে এবং নির্ভুল তথ্য পেতে সাহায্য করবে। তাদের ক্ষুদ্র আকার এবং প্রাকৃতিক গতিবিধি তাদের সনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন করে তুলবে, যা যুদ্ধক্ষেত্রে গোয়েন্দা অপারেশনের জন্য একটি বিশাল সুবিধা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, 'সাইবার তেলাপোকা'র মতো প্রযুক্তি শুধু সেনাবাহিনীর জন্যই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়া মানুষদের খুঁজে বের করা বা বিপজ্জনক পরিবেশে প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহের মতো কাজে এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। এই উদ্ভাবন সামরিক প্রযুক্তি এবং রোবোটিকসের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করতে বাধ্য করছে।
আপনার মতামত লিখুন: