সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মোবাইল ব্যাংকিং: সচেতনতায় কমবে প্রতারণা, বাড়বে সুরক্ষা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ১২:৪৯ পিএম

মোবাইল ব্যাংকিং: সচেতনতায় কমবে প্রতারণা, বাড়বে সুরক্ষা

ছবি- সংগৃহীত

ডিজিটাল বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে মোবাইল ব্যাংকিং। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে সহজ ও দ্রুত আর্থিক লেনদেনের সুবিধা পৌঁছে যাওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। বর্তমানে, বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়-এর মতো অসংখ্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) জনগণের আর্থিক জীবনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তবে সুবিধার পাশাপাশি এর অপব্যবহারও বাড়ছে। অসাধু চক্র নানা কৌশলে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলছে। তাই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নিরাপদ ব্যবহার ও প্রতারণার ধরন সম্পর্কে সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক গবেষণা অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার, অনলাইন জুয়া এবং অন্যান্য অবৈধ লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা এবং তা থেকে গ্রাহকদের সুরক্ষিত থাকার উপায় জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের আর্থিক খাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা যেমন মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করেছে, তেমনি এর অপব্যবহার নিয়ে শঙ্কাও বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি, মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। বিভিন্ন ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড, যেমন- ভুয়া ফোন কল, ফিশিং লিংক এবং সিম সোয়াপিংয়ের মতো কৌশল ব্যবহার করে প্রতারকরা গ্রাহকদের কষ্টার্জিত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রতারণা রুখতে প্রযুক্তিগত সুরক্ষার পাশাপাশি গ্রাহকদের ব্যক্তিগত সচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারকারীরা যদি তাদের ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- পিন নম্বর, ওটিপি (ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড) এবং পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখতে পারেন, তাহলে ৯০ শতাংশ প্রতারণা ঠেকানো সম্ভব।প্রতারকরা নিজেকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা এজেন্ট পরিচয় দিয়ে গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে পিন ও ওটিপি জানতে চায়। কখনো বলা হয়, 'আপনার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে', আবার কখনো 'আপনি লটারি জিতেছেন' বলে লোভনীয় প্রস্তাব দেওয়া হয়। এসব ক্ষেত্রে কখনোই কোনো তথ্য প্রদান করা উচিত নয়। ২. ফিশিং লিংক: মোবাইল ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠানো সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করলে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হতে পারে। এসব লিংক সাধারণত দেখতে অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মতো হলেও, এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে প্রতারকের হাতে। ৩. সিম সোয়াপিং: এই কৌশলে, প্রতারকরা গ্রাহকের সিম কার্ডের একটি ক্লোন তৈরি করে বা নতুন সিম তুলে নেয় এবং তা ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে। এই ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

  • গোপন তথ্য সুরক্ষিত রাখুন: আপনার পিন নম্বর, পাসওয়ার্ড বা ওটিপি কখনোই কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না, এমনকি যদি তারা কাস্টমার কেয়ারের কর্মী হিসেবেও পরিচয় দেয়।

  • অফিশিয়াল অ্যাপ ব্যবহার: সবসময় সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের অফিশিয়াল অ্যাপ বা নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।

  • সন্দেহজনক লিংক এড়িয়ে চলুন: অপরিচিত বা সন্দেহজনক কোনো লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

  • নিয়মিত পিন পরিবর্তন: নিয়মিত বিরতিতে আপনার পিন কোড পরিবর্তন করুন। এতে আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত থাকবে।

  • প্রতারণার শিকার হলে করণীয়: যদি আপনি কোনোভাবে প্রতারণার শিকার হন, তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কাস্টমার কেয়ার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করুন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং গ্রাহকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এই খাতকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। মিডিয়া এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কাছে এসব তথ্য পৌঁছানো সম্ভব।