সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবী থেকে চাঁদ প্রতি বছর প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার করে দূরে সরে যাচ্ছে। এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি ধীরগতির প্রক্রিয়া, যা কোটি কোটি বছর ধরে চলছে। এই দূরে সরে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে জোয়ার-ভাটার শক্তি এবং কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণ নীতি।
সূর্য ও চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণে পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের দিকে থাকে, সেখানে সমুদ্রের পানি ফুলে ওঠে, যা একটি জোয়ারের স্ফীতি তৈরি করে।
যেহেতু পৃথিবী তার নিজ অক্ষের ওপর ২৪ ঘণ্টায় একবার ঘোরে, এই স্ফীতি চাঁদের আকর্ষণের চেয়ে সামান্য এগিয়ে থাকে। পৃথিবীর ঘূর্ণন গতির কারণে এই স্ফীতি চাঁদকে সামনের দিকে ঠেলে দেয়, যার ফলে চাঁদ অতিরিক্ত শক্তি অর্জন করে এবং তার কক্ষপথ সামান্য প্রসারিত হয়। এর ফলস্বরূপ চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়।
চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে দূরে সরে যায়, তখন এটি পাল্টা টানে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতিকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয়। এর ফলে প্রতি শতাব্দীতে দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২.৩ মিলিসেকেন্ড করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদিও এই পরিবর্তন খুব ধীরগতির, বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, কোটি কোটি বছর পর এর ফলে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। তখন জোয়ার-ভাটার তীব্রতাও কম হবে।
বিজ্ঞানীরা চাঁদের দূরত্ব পরিমাপ করেন লেজার রেঞ্জিং নামক একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে নভোচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠে বিশেষ প্রতিফলক স্থাপন করেছিলেন।
সেই প্রতিফলকগুলোতে লেজার রশ্মি পাঠিয়ে তার ফিরে আসার সময় পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা চাঁদের সঠিক দূরত্ব নির্ধারণ করেন। এই পরিমাপ থেকেই জানা যায় যে চাঁদ ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে।
বর্তমানে চাঁদ যে গতিতে দূরে সরে যাচ্ছে, তাতে পৃথিবীর জন্য কোনো আশু বিপদ নেই। তবে চাঁদের এই ধীরগতির পরিবর্তন ভবিষ্যতে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।