রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উল্লম্ফনের নেপথ্যে কী?

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৭, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম

সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে উল্লম্ফনের নেপথ্যে কী?

ছবি- সংগৃহীত

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরব অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশটির বিচারিক প্রক্রিয়ায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের হার বেড়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে এই কঠোরতা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। কী কারণে এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়ছে এবং এর পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা ও বিশ্লেষণ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের ব্যবহার নজিরবিহীন গতিতে বেড়েছে। চলতি বছরের এখন পর্যন্ত বিভিন্ন অপরাধে ২০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক চোরাচালান দমনের কঠোর নীতির কারণেই দেশটিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আরব বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব বর্তমানে অবৈধ উত্তেজক মাদক ‘ক্যাপটাগন’-এর একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুতির পর এই মাদকের বাণিজ্য আরও বেড়েছে বলে ধারণা করা হয়।

২০২৪ সালে সৌদি আরবে ৩৩৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল, যা ১৯৯০ সাল থেকে সর্বোচ্চ। চলতি বছরে এই সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বছর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শুধু মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধের দায়ে ১৪৪ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই বছর মোট ২১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৩ সালে শুরু হওয়া ‘মাদকবিরোধী যুদ্ধ’-এর সঙ্গে বর্তমান মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। ওই সময় গ্রেপ্তারকৃতদের দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে এখন সাজা কার্যকর করা হচ্ছে।

প্রায় তিন বছর মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা স্থগিত রাখার পর ২০২২ সালের শেষ দিকে সৌদি সরকার আবার সর্বোচ্চ এই সাজা কার্যকর করা শুরু করে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১৯ জন, ২০২৩ সালে ২ জন এবং ২০২৪ সালে ১১৭ জনকে মাদক-সংশ্লিষ্ট অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের নিউ লাইনস ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ক্যারোলাইন রোজ বলেন, “এটা পরিষ্কার যে, মাদক সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির পথ বেছে নিয়েছে সৌদি আরব।” তবে এই বিষয়ে সৌদি আরবের কর্মকর্তারা এএফপির কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এই মাদকবিরোধী অভিযানে সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন বিদেশি নাগরিকরা। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা রিপ্রিভের কর্মকর্তা জীদ বাসিউনি বলেন, “সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ডের ক্ষেত্রে বিদেশি নাগরিকরা ন্যায়বিচার ও সুবিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।” চলতি বছরে ১২১ জন বিদেশি নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, বিদেশিদের এমন অপরাধে ক্রমবর্ধমান হারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, যার জন্য কখনও মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হওয়া উচিত নয়। সৌদি নাগরিকরাও এই দণ্ডের শিকার হচ্ছেন। চলতি বছরে কার্যকর করা মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে ৯৬ জনই সৌদি নাগরিক। তবে মাদকবিরোধী এই কঠোর অবস্থান কতটা কার্যকর, তা এখনো পরিষ্কার নয়।