জুলাই ৩১, ২০২৫, ১০:২৪ এএম
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট। এই সংঘাতের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনের হুথি-নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র বাহিনী বারবার ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে। তবে সম্প্রতি তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে, বিশেষ করে তেলআবিবের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার দাবি করে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই ধরনের হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তেলআবিবে অবস্থিত বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরসহ দখলদার ইসরাইলের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী। মোট পাঁচটি ড্রোন ও একটি ‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এ হামলা চালানো হয়।
বুধবার (৩০ জুলাই) পৃথক বিবৃতিতে এ দাবি করে হুথি আনসারুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী।
বিবৃতিতে ইয়েমেনি বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি বলেন, “প্রথম হামলায় ইসরাইল অধিকৃত ইয়াফা এলাকায় দুটি ড্রোন দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হামলায় যথাক্রমে আশকেলন ও নেগেভ (নাকাব) অঞ্চলে ইসরাইলি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করে আরও তিনটি ড্রোন পাঠানো হয়।”
সব অভিযান সফল হয়েছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, যতদিন পর্যন্ত গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না হবে এবং অবরোধ না তোলা হবে, ততদিন হামলা অব্যাহত থাকবে।
তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ড্রোন তারা সফলভাবে ভূপাতিত করেছে।
আরেক বিবৃতিতে ইয়াহিয়া সারি জানান, ইয়েমেনি বাহিনী তেলআবিবের বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দরে একটি হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে বিমানবন্দরটির বিমান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
ইয়েমেনি মুখপাত্র বলেন, তাদের বাহিনী ইসরাইলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ‘প্যালেস্টাইন-২’ নামক একটি নতুন হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সফল হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “এর ফলে লক্ষাধিক দখলদার ইসরাইলি আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে এবং বিমানবন্দর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।”
ব্রিগেডিয়ার সারি জানান, “দখলদার ইসরাইলের অব্যাহত আগ্রাসন এবং গাজায় চলমান অবরোধের প্রেক্ষিতে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়ানো এবং প্রতিরোধ আন্দোলনকে সমর্থন জানাতেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।” তিনি বলেন, ইয়েমেন একটি আরব রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি নৈতিক, ধর্মীয় এবং মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত রাখবে।
যদিও ক্ষেপণাস্ত্রটির প্রযুক্তিগত বিশদ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি, তবে এটিকে ‘হাইপারসনিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ এটি শব্দের গতির চেয়ে বহু গুণ দ্রুতগামী, যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য চরম চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান ইসরাইলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনের হুথি-নিয়ন্ত্রিত সেনাবাহিনী বারবার ইসরাইলগামী জাহাজ এবং স্থল লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। এবার তারা ইসরাইলের ভেতরে কেন্দ্রস্থল তেলআবিবে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবি করল। এ হামলার আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বা ইসরাইলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিউত্তর এখনো প্রকাশ পায়নি। তবে যদি এই দাবি সত্য হয়, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মোড়।
সূত্র: আল-মায়াদিন ও মেহের নিউজ।
আপনার মতামত লিখুন: