জুলাই ১৭, ২০২৫, ০২:৪৭ পিএম
আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়, যা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই প্রচণ্ড গরম থেকে বাঁচতে এবং যাত্রীদের স্বস্তি দিতে ট্যাক্সিচালকেরা এক অভিনব পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন। তাদের ট্যাক্সিগুলোর ছাদে এখন পুরোনো, ধুলোমাখা ড্রাম এবং এর সঙ্গে লাগানো মোটা পাইপ বসানোর মতো অদ্ভুত দৃশ্য চোখে পড়ছে। এগুলো মূলত হাতে তৈরি এয়ার কুলার, যা ট্যাক্সিচালকেরা নিজেরাই তৈরি করেছেন।
দেখতে অদ্ভুত লাগলেও এই হাতে তৈরি এয়ার কুলারগুলো প্রচণ্ড গরমে চালকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। ট্যাক্সিচালকেরা আফসোস করে জানান যে, এই তীব্র গরমের মধ্যে গাড়ির এসি প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায় বা ঠিকমতো কাজ করে না।
আব্দুল বারী নামক একজন ট্যাক্সিচালক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, "এই এয়ার কুলার এসির চেয়ে ভালো কাজ করে। এসি তো শুধু গাড়ির সামনের অংশ ঠাণ্ডা করে। কিন্তু এই কুলার পুরো গাড়ির ভেতরে বাতাস ছড়িয়ে দেয়।" এএফপি'র এক ভিডিওতে দেখা যায়, মি. বারী আঠালো টেপ দিয়ে কুলারের মোটা পাইপ, যেটি দিয়ে ঠাণ্ডা বাতাস আসতে পারবে, সেটি গাড়ির জানালায় লাগাচ্ছেন। এসময় একজন সহকারী ছাদে উঠে কুলারের মূল অংশটি ঠিক করছেন।
এই ব্যবস্থার একমাত্র সমস্যা হলো, দিনে দুইবার পানির ট্যাংক ভরতে হয়, জানান মি. বারী। "তবুও আমার জন্য এটা খুবই ভালো কাজ করে।"
বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আফগানিস্তান, এবং দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের দিক থেকেও অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ। দেশটির সরকার সতর্ক করেছে যে, সামনে কয়েক সপ্তাহজুড়ে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলের তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
কান্দাহারের আরেকজন ট্যাক্সিচালক গুল মোহাম্মদ জানান, কয়েক বছর আগে তিনি এই ধরনের হাতে বানানো কুলার ব্যবহার করা শুরু করেন, কারণ আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম হয়ে উঠছিল। তিনি বলেন, "এই গাড়িগুলোর এসি কাজ করতো না, আর গাড়ি মেরামত করতে অনেক খরচ হতো। তাই আমি এক টেকনিশিয়ানের কাছে গিয়ে একটি কাস্টম (নিজের মতো করে) কুলার বানিয়ে ফেললাম।" ৩২ বছর বয়সী এই চালক জানান, এর জন্য তার খরচ পড়েছিল মাত্র তিন হাজার আফগানি।
তাদের এই অভিনব উদ্যোগ যাত্রীদের কাছেও বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সী নোরুল্লাহ বলেন, "যখন কুলার থাকে না, তখন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি, গরমের জন্য আমি সবসময় আমার সাথে ওষুধও রাখি।" তিনি জানান, সম্প্রতি গরমজনিত অসুস্থতায় তাকে স্যালাইন নিতে হয়েছিল।
চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আফগানিস্তানের ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বসন্তকাল ছিল। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা গত সপ্তাহে বলেছে, আফগানিস্তানজুড়ে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে এবং এর ফলে সেখানকার ফসল ও গ্রামীণ জীবিকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আফগানিস্তানের মানবিক সংকটকে আরও তীব্র করবে।
যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর তালেবানরা ২০২১ সালের আগস্টে ক্ষমতা গ্রহণ করে। তখন থেকে আফগানিস্তানকে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আলোচনাগুলো থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন: