মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

ভারতে মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল, অস্তিত্ব সংকটে

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১৭, ২০২৫, ১২:০৮ পিএম

ভারতে মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিল, অস্তিত্ব সংকটে

ছবি- সংগৃহীত

প্রতি বছর আগস্ট মাসে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস আসে ১৯৪৭ সালের রক্তাক্ত বিভাজনের কথা মনে করিয়ে দিতে। সে সময় যারা ভারতে থেকে গিয়েছিলেন, সেই বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর কাছে দেশটির প্রতিশ্রুতি ছিল নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ-সুবিধা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা। বর্তমানে এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২০ কোটিরও বেশি, যা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডে প্রকাশিত মুম্বাই-ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক কবিতা আইয়ারের এক নিবন্ধে এই উদ্বেগ উঠে এসেছে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, সংখ্যার দিক থেকে বিশাল হলেও ভারতের মুসলিমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে। ১৯৪০-এর দশকে মুসলিম লীগ যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, তা যেন আজ বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ভারতে প্রথমবার ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের মানদণ্ড নিয়ে আসে। এরপর থেকে একের পর এক ঘটনায় ধর্মীয় বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

কাশ্মীরের হামলার পর ভারতে "অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের" বিরুদ্ধে দমননীতি আরও জোরদার হয়েছে। গুজরাট, মহারাষ্ট্র, দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ অনেক বাংলাভাষী মুসলিমকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে যাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই, সেইসব ভারতীয় মুসলিমদের নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ একই আইন অনুযায়ী অমুসলিমদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়, যাদের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই তারাও নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে।

মোদি সরকারের শাসনামলে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মুসলমানদের "অনুপ্রবেশকারী" বলে আখ্যা দেন। এছাড়া, বলিউডে মুসলমানদের নেতিবাচক চরিত্রে হাজির করা হচ্ছে এবং 'দ্য কেরালা স্টোরি'-র মতো বিতর্কিত চলচ্চিত্রগুলো রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাচ্ছে। প্রাত্যহিক জীবনেও মুসলিমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, যেখানে উবার চালক বা ডেলিভারি কর্মীরাও তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

১৯৫৩ সালে জওহরলাল নেহরু ভারতীয় সমাজে বিভাজন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে পার্থক্য হলো, তখন ভারত রাষ্ট্র বিভাজনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। বর্তমানে ভারত রাষ্ট্র নিজেই বিভাজনের চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে বলে সমালোচকরা মনে করছেন।

নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতের বহু মুসলমানের কাছে দার্শনিক হান্না আরেন্টের সতর্কবাণী আজ আর তত্ত্ব নয়, বরং প্রতিদিনের বাস্তবতা। তাদের অধিকার একে একে সংকুচিত হচ্ছে, এবং নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতিও ধীরে ধীরে নিঃশব্দে মুছে যাচ্ছে।