বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২

রাজনৈতিক শিষ্টাচার: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান সংকট

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম

রাজনৈতিক শিষ্টাচার: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ও বর্তমান সংকট

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের রাজনীতিতে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের বিষয়টি এখন এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। এক সময় দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতারা বিরোধী পক্ষকে সম্মান ও সৌজন্যতা দিয়ে কথা বলতেন, কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক আলোচনা প্রায়শই ব্যক্তিগত আক্রমণ, কটূক্তি এবং অশালীন মন্তব্যে রূপ নিচ্ছে। এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মতো নেতারা রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যেও একে অপরের প্রতি সম্মান বজায় রেখে চলতেন। তাদের বক্তৃতা বা লেখনিতে বিরোধী নেতাদের প্রতি কোনো অশালীন মন্তব্য বা আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহারের নজির বিরল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়াও একসময় পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের এই ধারা বজায় রেখেছিলেন। এমনকি, মহান সংসদে দাঁড়িয়েও তারা একে অপরের সম্মান রক্ষা করেছেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই চিত্রটি পাল্টে গেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্য জনসভা, টকশো এবং গণমাধ্যমে একে অপরের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ ও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছেন। এক দলের নেতা অন্য দলের প্রধানকে নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন, যা কেবল রাজনৈতিক শিষ্টাচার পরিপন্থী নয়, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকেও দুর্বল করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন আচরণ দেশের মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহনশীলতার অভাব তৈরি হচ্ছে। এর ফলে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলাও কঠিন হয়ে পড়ছে।

তবে এই হতাশার মাঝেও কিছু ইতিবাচক দৃষ্টান্ত দেখা যায়। যেমন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আবার, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান তারেক রহমানের নেতৃত্বকে প্রশংসা করেছেন, যা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। অসুস্থ হলে এক দলের নেতাকে অন্য দলের নেতা দেখতে যাওয়া, বা বিভিন্ন মতাদর্শের ছাত্রনেতাদের মধ্যে পারস্পরিক কুশল বিনিময়—এগুলোই সুস্থ রাজনীতির লক্ষণ।

রাজনৈতিক অঙ্গনের এই অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনৈতিক নেতাদেরকেই অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। মতভেদ থাকবে, তবে তা যেন শত্রুতার পর্যায়ে না যায়। আক্রমণাত্মক ভাষা পরিহার করে গঠনমূলক সমালোচনা এবং পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা জরুরি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শিষ্টাচার ফিরে এলে জনগণ আবারও রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা ফিরে পাবে এবং দেশের রাজনীতি একটি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।