রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

কোরআন বোঝার জন্য সিরাতুন্নবী চর্চা অনিবার্য, ইসলামী জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ১২:৪১ পিএম

কোরআন বোঝার জন্য সিরাতুন্নবী চর্চা অনিবার্য, ইসলামী জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ

ছবি - সংগৃহীত

মানবসভ্যতার ইতিহাসে কোরআনুল কারীম এক অনন্য মহাগ্রন্থ, যা কেবল আইন-কানুন নয়, বরং জীবন-দর্শনের এক পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা। তবে কেবল আক্ষরিক অনুবাদ বা ব্যাকরণ দিয়ে এর গভীরতা উপলব্ধি করা কঠিন। কোরআনকে পরিপূর্ণভাবে বুঝতে হলে প্রয়োজন একজন জীবন্ত মডেল, যিনি এর প্রতিটি আয়াতকে নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করেছেন। সেই আদর্শ মডেল হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর জীবন, তাঁর সিরাত— কোরআনের এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এই কারণে ইসলামী জীবন গঠনে কোরআন বোঝার জন্য সিরাতুন্নবী চর্চা অনিবার্য বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, কোরআন আল্লাহর কালাম, আর সিরাত হলো সেই কালামের বাস্তব রূপায়ণ। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, "নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ— তার জন্য, যে আল্লাহর প্রতি এবং আখিরাতের দিনের প্রতি আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।" (সুরা: আহযাব, আয়াত: ২১)। এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়, নবীজির জীবনই আমাদের জন্য অনুসরণীয়। হযরত আয়েশা (রা.)-কে যখন নবীজির চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তখন তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “তাঁর চরিত্রই ছিল কোরআন।” (সহিহ মুসলিম)। এতে প্রমাণিত হয়, নবীজির জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ই পবিত্র কোরআনের জীবন্ত ব্যাখ্যা।

পবিত্র কোরআনে নামাজের নির্দেশ এসেছে, কিন্তু কীভাবে নামাজ পড়তে হবে, তা নবীজির সিরাত ছাড়া বোঝা সম্ভব নয়। একইভাবে যাকাত, জিহাদ, ধৈর্য, ন্যায়, প্রতিবেশীর অধিকার— এসবের পূর্ণাঙ্গ রূপ কেবল সিরাতের মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়। সাহাবায়ে কেরাম (রা.) কোরআনকে বুঝতেন নবীজির জীবন দেখে। তাঁরা বলতেন, "যখন কোরআনের কোনো আয়াত নাজিল হতো, তখন আমরা রাসুল (সা.)-এর জীবনে তার বাস্তব রূপ দেখতে পেতাম।" উদাহরণস্বরূপ, যখন ধৈর্যের আয়াত নাজিল হতো, তখন তাঁরা দেখতেন তায়েফের ময়দানে রক্তাক্ত অবস্থায়ও নবীজি দোয়া করছেন। যখন ক্ষমার আয়াত আসত, তখন মক্কা বিজয়ের দিনে তিনি শত্রুকেও ক্ষমা করে দিতেন।

আধুনিক যুগে অনেকেই কোরআন হাতে রাখেন, তাফসীর পড়েন, কিন্তু কোরআনের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পারেন না। কারণ, সিরাতকে অবহেলা করা হয়। সিরাত হলো সেই আয়না, যেখানে কোরআনের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট দেখা যায়। সিরাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কোরআনকে বোঝার চেষ্টা করলে তা হবে মানচিত্র দেখে ভ্রমণ শুরু করা, কিন্তু কোনো পথপ্রদর্শক ছাড়া অচল হয়ে পড়া। তাই ইসলামী জীবনকে পূর্ণাঙ্গ করতে হলে কোরআনের পাশাপাশি সিরাতুন্নবীর চর্চা অপরিহার্য। রাসূল (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি দিক— তাঁর দাওয়াত, ধৈর্য, সাহস, ক্ষমা এবং ইবাদত— আমাদের সামনে কোরআনের জীবন্ত অর্থ উন্মোচন করে। যারা কোরআনকে ভালোবাসতে চায় এবং নিজেদের জীবনে ধারণ করতে চায়, তাদের অবশ্যই সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে।