জুলাই ২৫, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
জুমার দিন মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ দিন। এই দিনে কিছু বিশেষ আমল রয়েছে, যা সঠিকভাবে পালন করলে বান্দার গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত লাভ করা যায়। এই আমলগুলো মুসলিমদের জীবনে এক নতুন আধ্যাত্মিকতা নিয়ে আসে।
১. জুমার দিনের গোসল
জুমার দিনে গোসল করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ। নবীজি (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে, উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর মসজিদে যায় ও অন্যদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে আগে বাড়ে না, তারপর যতদূর সম্ভব নামাজ পড়ে এবং নীরব থাকে যখন ইমাম খুতবা দেন, তার এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।" (সহিহ বুখারি: ৮৮৩, সহিহ মুসলিম: ৮৫৭)।
২. উত্তম পোশাক পরিধান ও সুগন্ধি ব্যবহার
জুমার দিনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন উত্তম পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা মুস্তাহাব। এটি শুধু ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার অংশ নয়, বরং জুমার দিনের সম্মান ও মর্যাদাকে তুলে ধরে।
৩. মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা
জুমার নামাজে ইমামের খুতবা মনোযোগ সহকারে শোনা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন কথা বলা বা অন্য কোনো কাজে লিপ্ত থাকা নিষিদ্ধ। নবীজি (সা.) বলেছেন, "যখন ইমাম খুতবা দেন, আর তুমি কাউকে 'চুপ করো' বললে, তবে তুমিও অনর্থক কাজ করলে।" (সহিহ বুখারি: ৯৩৪)। মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলে জুমার নামাজের পূর্ণ সওয়াব লাভ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়।
৪. সূরা কাহফ তিলাওয়াত
জুমার দিনে সূরা কাহফ তিলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহফ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে নূর আলোকিত করে দেন।" (সুনানে নাসাঈ: ১৭৭৩, সহিহ তারগিব: ৭৩৬)। এই নূর বান্দার পাপ মোচনে সহায়তা করে।
৫. বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা
জুমার দিন ও রাতে নবীজি (সা.)-এর উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত। নবীজি (সা.) বলেছেন, "তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।" (আবু দাউদ: ১০৪৭)। দরুদ পাঠ গুনাহ মাফের অন্যতম কারণ।
৬. কাতার সোজা করা ও খালি জায়গা পূরণ করা
জুমার নামাজে কাতার সোজা করা এবং কাতারের মধ্যে কোনো ফাঁকা জায়গা না রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবীজি (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কাতার সোজা করবে, আল্লাহ তার চেহারা উজ্জ্বল করবেন। আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তার চেহারা বিকৃত করবেন।" (আবু দাউদ: ৬৬২)। এছাড়া, যে ব্যক্তি জুমার দিন অন্যদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে খালি জায়গা পূরণ করে, তারও গুনাহ মাফ হয়।
৭. জুমার শেষ ওয়াক্তে দোয়া করা
জুমার দিনের একটি বিশেষ মুহূর্ত আছে, যখন দোয়া করলে তা কবুল হয়। অধিকাংশ আলেমদের মতে, এটি আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। নবীজি (সা.) বলেছেন, "জুমার দিনে একটি সময় আছে, যদি কোনো মুসলিম বান্দা ওই সময়টায় দাঁড়িয়ে নামাজরত অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণ চায়, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দেন।" (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)। এই সময় দোয়া ও ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করলে গুনাহ মাফ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জুমার দিনের এই আমলগুলো প্রতিটি মুসলিমের জন্য আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক দারুণ সুযোগ। এগুলো শুধু গুনাহ মাফ করে না, বরং ঈমানকে সতেজ করে এবং জীবনে প্রশান্তি নিয়ে আসে।
আপনার মতামত লিখুন: