শনিবার, ২৬ জুলাই, ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২

স্মৃতি হারানো ব্যক্তির নামাজ: শরিয়তের সহজ বিধান

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম

স্মৃতি হারানো ব্যক্তির নামাজ: শরিয়তের সহজ বিধান

মানবজীবন একটি বিচিত্র অধ্যায়। বয়সের কারণে বা বিভিন্ন অসুস্থতার প্রভাবে মানুষ স্মৃতিভ্রম বা ডিমেনশিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই ধরনের অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কাজগুলো, এমনকি সাম্প্রতিক ঘটনা বা কাজও ভুলে যান। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ক্ষেত্রে, যারা এই রোগে আক্রান্ত হন, তাদের জন্য নামাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত আদায় করা কঠিন হয়ে পড়ে। তারা নামাজের রাকাত সংখ্যা ভুলে যান, এমনকি নিয়ত করেছেন কি না, তাও মনে রাখতে পারেন না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নামাজের বিধান কী, তা নিয়ে অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ সংশয়ে থাকেন। ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্র এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে, যা অসুস্থ ব্যক্তির পাশাপাশি তাদের পরিবারের জন্যও সহজ পথ দেখায়।

স্মৃতিভ্রম রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নামাজ আদায়ের সময় প্রায়শই নামাজের রাকাত সংখ্যা ভুলে যান। এমনকি এক নামাজের নিয়ত কয়েকবার করেও মনে রাখতে পারেন না যে তিনি নামাজ শুরু করেছেন কিনা। এমন পরিস্থিতিতে তাদের নামাজের বিধান সম্পর্কে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের সুনির্দিষ্ট মতামত রয়েছে।



 

যদি কোনো ব্যক্তির স্মৃতি এতোটা লোপ পায় যে তিনি নিজে নিজে নামাজ আদায় করতে সক্ষম নন, তবে তার নামাজের বিধান হলো - যদি কেউ তাকে পাশ থেকে ইশারা করে বা মুখে বলে নামাজ আদায়ে সাহায্য করে এবং তিনি সেভাবে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হন, তাহলে তিনি সেভাবেই নামাজ পড়বেন। এটি শরিয়তের একটি সহজ ও মানবিক বিধান।

এই বিষয়ে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিশিষ্ট তাবেঈ রুকাইন ইবনে রাবী (রহ.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, "একবার আমি হজরত আসমা (রা.)-এর কাছে গেলাম। তখন তিনি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেছেন। আমি দেখলাম, তিনি নামাজ পড়ছেন আর একজন নারী পাশ থেকে তাকে বলে দিচ্ছেন, 'এখন রুকু করুন, এখন সিজদা করুন।'" (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৩৪৯৭)। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, অসুস্থ বা স্মৃতিভ্রম ব্যক্তির নামাজের ক্ষেত্রে অন্যজনের সহায়তা গ্রহণ করা জায়েজ এবং এটি শরিয়ত সম্মত।

সুতরাং, যদি কোনো ব্যক্তি ভুলে যাওয়ার রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তার পরিবারের লোকজনের উচিত তাকে নামাজের নিয়ত, রুকু, কেরাত (কুরআন তিলাওয়াত) এবং রাকাতের ক্ষেত্রে সাহায্য করা। এতে অসুস্থ ব্যক্তি যেমন সঠিকভাবে ইবাদত করতে পারবেন, তেমনি তার তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবকরাও সওয়াব লাভ করবেন।

তবে, যদি কেউ এভাবে বলে দেওয়ার পরও নামাজ পড়তে না পারেন এবং রাকাত সংখ্যা মনে রাখতে না পারেন, অর্থাৎ একেবারেই সক্ষম না হন, এমন পরিস্থিতিতে তার ওপর নামাজ আদায় করা আবশ্যক নয়। এই সময়ের নামাজগুলো পরবর্তীতে কাজা করাও তার জন্য আবশ্যক নয়। এমনকি এই অবস্থায় তার মৃত্যু হলে, ওই নামাজগুলোর জন্য কোনো ফিদিয়া (বিনিময়) দেওয়াও আবশ্যক হবে না। ইসলামী শরিয়ত এক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যক্তির উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেনি।