মঙ্গলবার, ০৬ জানুয়ারী, ২০২৫, ২৪ জুন ২০২৫ , ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টেনিস চ্যাম্পিয়ন জারিফ মান বাড়াতে আমেরিকায়

স্পোর্টস ডেস্ক

জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ১২:০০ এএম

টেনিস চ্যাম্পিয়ন জারিফ মান বাড়াতে আমেরিকায়
টেনিস চ্যাম্পিয়ন জারিফ মান বাড়াতে আমেরিকায় বিজয় দিবস টেনিস টুর্নামেন্টের পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন জারিফ আবরার। বয়স মাত্র ১৭। এই বয়সেই বাংলাদেশ টেনিসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন জারিফ। যিনি গত বছরের নভেম্বরে বাহরাইনে অনুষ্ঠিত ডেভিস কাপে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফর্মারও। 

ফুটবল, ক্রিকেটের রমরমা সময়ে জারিফের চোখেমুখে শুধু টেনিসের স্বপ্ন। ফ্লোরিডায় টেনিস খেলার পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন। আজ (শুক্রবার) বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে পুরুষ এককে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় সবাই উচ্চ শিক্ষার জন্য গেলেও আমি মূলত টেনিসে উন্নতি করতে গিয়েছি। টেনিসই আমার মূল লক্ষ্য, পড়াশোনাটা পাশাপাশি বলতে পারেন।’বিশ্বের অন্যতম সেরা কোচদের একজন অ্যালেক্স। তার বাসাতেই থাকছেন জারিফ। এমন সুযোগ পাওয়ায় বেশ তৃপ্ত বাংলাদেশের এই টেনিস খেলোয়াড়, ‘আমি বড় টেনিস খেলোয়াড় হতে চাই। 

এজন্য আমেরিকার ফ্লোরিডায় হোপস এন্ড পারফরম্যান্স একাডেমিতে রয়েছি। সেই একাডেমির কোচ অ্যালেক্সের তত্ত্বাবধানে আছি। যিনি অত্যন্ত বড় মাপের কোচ। তিনি আমাকে বেশ সান্নিধ্য দিয়েছেন, যা বড় পাওয়াই।’ জারিফ আমেরিকায় গিয়েছেন মাস নয়েক আগে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন ডেভিস কাপের ট্রায়ালে। বাহরাইনে ডেভিস কাপ খেলে আবার দেশে ফিরেছেন। বিজয় দিবস টুর্নামেন্ট হওয়ায় এটা খেলেই পরবর্তীতে আমেরিকায় ফিরতে চান, ‘আমেরিকায় এই সময় ছুটি থাকে। তাই এখানে টুর্নামেন্ট হওয়ায় খেললাম। 

ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ফ্লোরিডায় পৌঁছাব।’আমেরিকায় পড়াশোনা ও খেলাধুলার প্রশিক্ষণ বেশ ব্যয়বহুল। সেখানে তাই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি জারিফ। নয় মাসের মধ্যে তিন মাস কিছুটা পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। বাকি ছয় মাস তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত মেজর সাজমুল হককেই খরচ বহন করতে হয়েছে। তাই আমেরিকায় বাকি দিনের পথচলা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত জারিফ, ‘বাবার জন্য একটু কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বড় টেনিস খেলোয়াড় হওয়ার জন্য ভালো হতো।’জারিফের বাবা সাজমুল বেশ টেনিস প্রেমিক। আজ স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে এসেছিলেন ছেলের খেলা দেখতে। ছেলের স্বপ্ন বাস্তবায়নে শতভাগ চেষ্টা থাকছে তার, ‘জারিফের টেনিসের আগ্রহ অনেক এবং ইতোমধ্যে নিজেকে প্রমাণও করেছে। 

সে সময়ের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকে। যখন বয়স বারো তখন সে ১৪ ক্যাটাগরিতে খেলেছে। বর্তমানে ১৭ বছর হলেও আঠারো ক্যাটাগরিতে খেলেনি নতুনদের উঠে আসার জন্য। ওর বড় মাপের খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাবা হিসেবে আমার দায়িত্ব সেটা পূর্ণতা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করার।’জারিফের টেনিসে আসার পেছনে বাবা সাজমুলের আগ্রহ ও অবদানও রয়েছে। সাজমুলের যশোরে পোস্টিং থাকাবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে বাস্কেটবল–ফুটবলের পাশাপাশি টেনিস খেলেছেন জারিফ। তার বাবা আবার তাদের নিজস্ব টুর্নামেন্টে টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হতেন। 

সেই থেকে জারিফের টেনিসে বাড়তি টান। পাশাপাশি তার বাবার একটি আলাদা ভিশনও ছিল, ‘অবশ্যই ফুটবল–ক্রিকেট জনপ্রিয় এবং অনেক খ্যাতির সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ইন্ডিভিজুয়াল স্পোর্টসে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার অনেক বড় জায়গা রয়েছে। সারা বিশ্বে সার্বিয়াকে মানুষ চেনে ফুটবলের চেয়ে (নোভাক) জোকোভিচের জন্য।’জারিফের টেনিসের হাতেখড়ি বিকেএসপির কোচ টিংকুর কাছে, ‘যশোর ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশ আমাকে টেনিসে আকৃষ্ট করলেও টিংকু স্যারের ট্রেনিং আমাকে টেনিসের প্রকৃত স্বাদ দিয়েছে। তার কাছ থেকেই আমি পেশাদার টেনিস খেলা শিখেছি ছোট বয়সেই।’ জারিফকে নিয়ে সম্ভাবনা দেখছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইসতিয়াক আহমেদ কারেন। তার পর্যবেক্ষণ, ‘সে ইতোমধ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে। নিজেকে আরও উন্নতির জন্য এখন আমেরিকায় অনুশীলন করছে। তার পরিবারও অনেক আন্তরিক। 

এই ধারাবাহিকতা থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশের টেনিসে তার আরও অবদান রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।’ বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে বয়সভিত্তিক দুই পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বিকেএসপির শিক্ষার্থী কাব্য গায়েন। জারিফের গুণে তিনিও মুগ্ধ, ‘জারিফ ভাই অত্যন্ত ভালো মাপের খেলোয়াড়। তার থেকে আমার অনেক কিছুই শেখার রয়েছে।’ বিজয় দিবস টুর্নামেন্টে পুরুষ এককে আর্মি অফিসার্স ক্লাবের জারিফ আবরার, দ্বৈতে আমেরিকান ক্লাবের মো. রুস্তম আলী ও মিলন হোসেন জুটি, মহিলা এককে বিকেএসপির হালিমা জাহান এবং দ্বৈতে ঝালকাঠি টেনিস ক্লাবের সুস্মিতা সেন ও সুমাইয়া আক্তার জুটি চ্যাম্পিয়ন হয়। বালক এককের অনূর্ধ্ব-১৮ ও ১৪ বিভাগে বিকেএসপির কাব্য গায়েন, বালিকা একক অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগে বিকেএসপির হালিমা জাহান, বালিকা একক অ-১৪ বিভাগে মাদারীপুর টেনিস ক্লাবের জান্নাত হাওলাদার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। 

প্রতিযোগিতায় মোট ৮টি ইভেন্ট ৩০টি ক্লাব/সংস্থা থেকে ২১০ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিযোগিতায় মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার প্রাইজমানি এবং সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। ফাইনাল শেষে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রধান অতিথি হিসেবে পুরষ্কার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুস ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন– বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ (কারেন), স্পন্সর প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের কর্মকর্তাবৃন্দ।
পরবর্তী খবর
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক ২০২৫

পারমাণবিক অস্ত্রে শক্তিশালী পাকিস্তান, সামগ্রিক শক্তিতে এগিয়ে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম

Image

এআই দিয়ে তৈরি এইচএসসি পরীক্ষার মুহূর্ত।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক শক্তির তুলনা করা হলে সেখানে জনবল, অস্ত্রশস্ত্র, বাজেট, পারমাণবিক ক্ষমতা ও কৌশলগত নীতি–আদর্শের এক জটিল হিসাব–নিকাশ প্রতিফলিত হয়। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আছে। এ সময়ে একাধিক যুদ্ধে জড়ানোর ইতিহাস রয়েছে তাদের। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে উভয় দেশ উল্লেখ করার মতো সামরিক শক্তিও বজায় রেখে চলেছে।

গত মঙ্গলবার ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ওই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। এ হামলায় পাকিস্তানের মদদ থাকার অভিযোগ তুলে ভারত দেশটির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা ব্যবস্থা ঘোষণা করেছে পাকিস্তানও।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান সামরিকভাবেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে—এ আশঙ্কা অনেকের। প্রাসঙ্গিকভাবে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসছে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’।

‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে করা এ প্রতিবেদন ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার ওয়েবসাইটে গতকাল শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো:

সামগ্রিক সামরিক র‍্যাঙ্কিং ও সক্ষমতা সূচক

‘জিএফপি ২০২৫’–এ ৬০টির বেশি বিষয়ের (জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থা ইত্যাদি) ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, সক্ষমতা সূচকে স্কোর ০.১১৮৪ (কম স্কোর মানে বেশি শক্তিশালী সেনাবাহিনী)। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম, স্কোর ০.২৫১৩।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

র‍্যাঙ্কিংয়ে ভারতের এ অবস্থান দেশটির বড় জনসংখ্যা, বৃহত্তর প্রতিরক্ষা বাজেট ও বিস্তৃত পরিসরের সামরিক সম্পদের প্রতিফলন। অন্যদিকে পাকিস্তান ছোট অর্থনীতির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা ও বৈদেশিক সরবরাহকারী, বিশেষ করে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা সত্ত্বেও ভারতকে মোকাবিলায় কৌশলগত বিষয়গুলোয় মনোযোগী। ফলে নির্দিষ্ট খাতগুলোয় প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে রয়েছে দেশটি।

সামরিক–বেসামরিক জনশক্তি
প্রচলিত যুদ্ধে জনবল গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ভারত ও পাকিস্তানের জন্যও তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিশাল জনসংখ্যা ও স্থলবাহিনীর ওপর উভয় দেশেরই নির্ভরতা রয়েছে।

ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি (বিশ্বে দ্বিতীয়)। সক্রিয় জনশক্তি ৬৬ কোটি ২০ লাখ। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার (বিশ্বে দ্বিতীয়)। মোট সামরিক (সক্রিয় ও রিজার্ভ সেনা এবং আধা সামরিক বাহিনী) জনবল ৫১ লাখ।

অন্যদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ২০ লাখ (বিশ্বে পঞ্চম)। সক্রিয় জনবল ১০ কোটি ৮০ লাখ। সক্রিয় সেনা ৬ লাখ ৫৪ হাজার (বিশ্বে সপ্তম)। রিজার্ভ সেনা ৬ লাখ ৫০ হাজার। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য জিএফপিতে স্পষ্টভাবে পরিমাপ করা হয়নি, তবে উল্লেখযোগ্য (রেঞ্জার্স ও ফ্রন্টিয়ার কোরসহ)। মোট সামরিক শক্তি ১৭ লাখ (সক্রিয়, রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনী)।

ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনীও বড়। পাকিস্তান যদিও কম জনবল নিয়ে কাজ করে, তবে তাদের মধ্যে ‘মুজাহিদ’–এর মতো আইএসআই–নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত বাহিনীগুলো রয়েছে।

প্রতিরক্ষা বাজেট

ভারতের বাজেট (২০২৫-২৬) ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার (যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়)। এটি জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ। এ ব্যয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

পাকিস্তানের বাজেট ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার (অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই)। এ ব্যয় জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা ১০ কোটি ডলার (মূলত চীন ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে)।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। এ বিপুল প্রতিরক্ষা ব্যয় ভারতের সামরিক খাতে প্রযুক্তি ও অবকাঠামোগত এবং জনশক্তির আধুনিকীকরণে আরও বেশি বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সহায়ক হচ্ছে। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তা এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ ব্যয় হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়।

স্থলবাহিনী

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। দেশ দুটির মধ্যে ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। দুদেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ঘরানার যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে।

ভারতের ট্যাংক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।

পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো।

ট্যাংক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও ট্যাংকবহর প্রতিযোগিতামূলক। এ বহর চীনের ভিটি–৪–এর মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা। রয়েছে এম১১৩ ও আল–ফাহাদের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা স্থল সমরযান।

বিমানবাহিনী

আধুনিক যুদ্ধে, বিশেষত দ্রুত সাড়া দেওয়া ও নির্ভুল আক্রমণের জন্য বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস–৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল (এইডব্লিউঅ্যান্ডসি)’ ব্যবস্থা।

পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ–১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী হেলিকপ্টার (এএইচ–১এফ কোবরাসহ)। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।

ভারতের বিমানবহর আকারে বড় ও বৈচিত্র্যময়; তবে স্কোয়াড্রনের ঘাটতি আছে। পাকিস্তানের বিমানবহর তুলনামূলক ছোট হলেও তার আধুনিকায়ন হচ্ছে। পাকিস্তানের এইডব্লিউঅ্যান্ডসি–সুবিধা বাড়তি নজরদারিতে ব্যবহার করা হয়।

নৌবাহিনী

ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় ও আরব সাগরে পাকিস্তানের অভিযানের জন্য নৌসক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহী রণতরি আছে ২টি। সাবমেরিন ১৮টি (পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ)। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি (নৌবাহিনীর)। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০।

পাকিস্তানের জাহাজ ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।

ভারতীয় নৌবাহিনী তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ও গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর উপযোগী। পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত ছোট নৌবাহিনী মূলত উপকূলীয় প্রতিরক্ষা ও আঞ্চলিক অভিযানে মনোযোগ দেয়। বিমানবাহী রণতরি না থাকা ও সীমিতসংখ্যক যুদ্ধবিমানের কারণে গভীর সমুদ্র দেশটির নৌবাহিনীর অভিযান চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

পারমাণবিক সক্ষমতা

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার), মিরেজ ২ হাজার ও রাফায়েল এবং সামুদ্রিক প্রতিরক্ষায় আইএনএস আরিহান্ট। পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার (নো ফার্স্ট ইউজ/এনএফইউ) নীতির পক্ষে ভারত। তবে এ ধরনের হামলার শিকার হলে ব্যাপক আকারে প্রতিশোধমূলক হামলার পক্ষে দেশটি।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

কৌশলগত জোট ও জটিল মূল্যায়ন

ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। আছে সীমিত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও।

জনবল, সামরিক ব্যয় ও প্রচলিত অন্যান্য প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরমাণু ও কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধ ভান্ডার, অপ্রতিসম যুদ্ধকৌশল ও চীনের জোরালো সমর্থন দেশটিকে এক সুবিধাজনক প্রতিরক্ষা অবস্থানে রেখেছে।

প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের আধুনিকায়নে অন্যতম বাধা তার আমলাতন্ত্র ও দ্বৈত মনোযোগ (চীন–পাকিস্তান)। পুরোনো বিমানবহরও দেশটির জন্য একটি বাধা। ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ অভিযানে বেশি মনোযোগও দেশটির আরেক দুর্বলতা।

অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংগ্রাম, তুলনামূলক ছোট জনশক্তি, পুরোনো সামরিক সরঞ্জাম ও আঞ্চলিক উত্তেজনা তার সামরিক সক্ষমতায় বাধা হয়ে আছে।

আরএস