জুলাই ২০, ২০২৫, ০২:২৬ পিএম
সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের নারী সাংবাদিক ও ব্যবসায়ী সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল। শনিবার (১৯ জুলাই, ২০২৫) রাতে তাকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, যার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পুতুল নিজেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই গ্রেফতারের ঘটনা সারাদেশে বিশেষ করে সাংবাদিক ও রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
আমাদের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্রেফতার হওয়া সাবিনা ইয়াসমিন পুতুল ‘ভোরের সময়’ নামক পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তার পরিচিতি শুধু সাংবাদিক হিসেবে নয়, তিনি একজন ব্যবসায়ীও। স্থানীয়দের মতে, একসময় তিনি আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত থাকলেও, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে তিনি সরকারের সমালোচক হয়ে ওঠেন। এই পরিবর্তন তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার এক নতুন দিক তুলে ধরে। তার এই পরিবর্তনশীল ভূমিকা সারাদেশে আলোচনায় এসেছে, বিশেষ করে তার গ্রেফতারের পর।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট উপজেলার শিবপুর এলাকায় অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলার ঘটনায় একটি সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছিল। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর ইসলাম নিশ্চিত করেছেন যে, সেই মামলায় পুতুলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সেই প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তার গ্রেফতারের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ে ঘুরে দেখা গেছে, সাবিনা ইয়াসমিন পুতুলের গ্রেফতারের ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তার মুক্তির পরিবর্তে, স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা থানা ফটকে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, পুতুল দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিএনপির নেতাদের, বিশেষ করে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক পোস্ট ও অপপ্রচার চালিয়ে আসছিলেন। এই ঘটনা রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করেছে এবং দলীয় আনুগত্যের বাইরেও ব্যক্তিগত বিরোধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সাবিনা ইয়াসমিন পুতুলের গ্রেফতারের ঘটনা সারাদেশে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। একদিকে একজন সাংবাদিক ও আন্দোলনের নেতার গ্রেফতার, অন্যদিকে বিরোধী দলের ভিন্ন প্রতিক্রিয়া — এই ঘটনা বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে। তার গ্রেফতারের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং এর আইনি প্রক্রিয়া সারাদেশের মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই ঘটনা ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে আরও আলোচনার সুযোগ করে দেবে বলে আশা করা যায়।
আপনার মতামত লিখুন: