মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২

নেছারাবাদে বন্ধ হচ্ছে ডকইয়ার্ড, কর্মহীন হাজারো শ্রমিক

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ১০:২৮ এএম

নেছারাবাদে বন্ধ হচ্ছে ডকইয়ার্ড, কর্মহীন হাজারো শ্রমিক

ছবি- সংগৃহীত

একসময়ের ব্যস্ততম নৌযান নির্মাণ কেন্দ্র পিরোজপুরের নেছারাবাদে এখন শুধুই নীরবতা। ছোট-বড় প্রায় ৩০টি ডকইয়ার্ডের মধ্যে গত দুই বছরে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত সাতটি। এই বন্ধ হয়ে যাওয়া ডকইয়ার্ডগুলোর সঙ্গে স্বপ্ন হারিয়েছেন প্রায় আড়াই হাজার দক্ষ শ্রমিক। সংকটে রয়েছে বাকি ডকইয়ার্ডগুলোও।

৩৫ বছর আগে আবদুল বারেক ও রুস্তম আলীর হাত ধরে নেছারাবাদের সন্ধ্যা নদীর তীরে এই শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল। একসময় এই ডকইয়ার্ডগুলোতে বছরে প্রায় ২০০টি নতুন নৌযান তৈরি হতো এবং দেড় থেকে দুই হাজার নৌযান মেরামত করা হতো। ৫০ লাখ থেকে শুরু করে ১০ কোটি টাকা মূল্যের লঞ্চ, কার্গো ও উন্নতমানের ট্রলার নির্মাণ হতো এখানে। তবে করোনাভাইরাস মহামারির পর থেকেই হঠাৎ থমকে যায় এই শিল্পের চাকা। কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি এবং সড়ক ও রেলপথে পরিবহনের ওপর নির্ভরতা বাড়ার ফলে ডকইয়ার্ডগুলো টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে।

বর্তমানে নেছারাবাদের ডকইয়ার্ডগুলোতে সীমিত পরিসরে শুধু মেরামতের কাজ চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে ৫০ থেকে ১০০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, সেখানে এখন মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন কাজ করছেন। একসময়কার ব্যস্ত জায়গাগুলো এখন খালি পড়ে আছে। নুরুল হায়দার নামে এক শ্রমিক বলেন, "আমি প্রায় ১৮ বছর ধরে এই কাজ করি। এখন কাজ তেমন নেই, যে মজুরি পাই তাতে আমাদের সংসারও চলে না।" মো. রিয়াজ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, "আগে দিনে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার হতো, এখন হাত গুটিয়ে বসে আছি। সরকার সহযোগিতা না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।"

ডকইয়ার্ড মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, মূলত করোনার পর বিদেশি জাহাজ না আসায় কাঁচামাল ও পুরোনো জাহাজের জোগান কমে গেছে, যার ফলে দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। তার মতে, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে এই শিল্প আর টিকে থাকবে না। বিশেষজ্ঞরা এই শিল্পকে বাঁচাতে সহজ শর্তে ঋণ, কাঁচামালের সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ এবং শ্রমিকদের জন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছেন। নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, তিনি গত বছর এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের জন্য একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সার্বিক নজর রাখছে।