জুলাই ২৫, ২০২৫, ০৫:৫৮ পিএম
বর্ষাকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায়শই ঝড়ো বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাত দেখা যায়। এর ফলে সাগর ও নদীগুলো উত্তাল হয়ে ওঠে, যা নৌ-চলাচলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় জেলেদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমানে এমনই এক বিরূপ আবহাওয়ার কারণে মেঘনা নদী ও এর মোহনা উত্তাল হয়ে উঠেছে, যার ফলে একটি ট্রলারডুবিসহ জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাব ও তীব্র ঝড়ো দমকা বাতাসে মেঘনা নদী ও সাগর মোহনা উত্তাল হয়ে উঠেছে। শুক্রবার ভোর থেকে ঝড়ো হাওয়ার কারণে ভোলার ইলিশা ফেরি ও লঞ্চঘাটের পন্টুন বিধ্বস্ত হয়েছে এবং জনজীবনে ব্যাপক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে রাজাপুর ইউনিয়নের জনতা বাজারের পাশে মিজি বাজারের কামাল চৌকিদার (কামাল সরদার) মাঝির একটি ট্রলার ১৩ জন জেলেসহ হাতিয়ার কাছাকাছি টেঙ্গার চর এলাকায় ডুবে গেছে। ট্রলারডুবির এই ঘটনায় ১২ জন জেলেকে উদ্ধার করা গেলেও ইলিশা কন্দবপুর ৩নং ওয়ার্ডের মহিন দেওয়ানের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (২৬) নিখোঁজ রয়েছেন।
ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ এবং সংগঠনের সম্পাদক শেখ মামুন জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাছ ধরে কামাল মাঝির ট্রলারটি ফিরছিল। এ সময় বাতাসের তোড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়।
এদিকে বৈরী পরিবেশের কারণে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সকাল থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর, ভোলা (মির্জাকালু)-মনপুরা, মনপুরা-ঢাকা, মির্জাকালু-আলেকজান্ডার, বেতুয়া-ঢাকা রুটসহ অভ্যন্তরীণ ১০টি গুরুত্বপূর্ণ রুটে লঞ্চ, সি-ট্রাক ও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে সাগরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ওই নির্দেশনার পর শুক্রবার লঞ্চ, সি-ট্রাক ও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ভোলার ইলিশা ঘাটে বহু যাত্রী আটকা পড়েছেন। সকাল থেকে অপেক্ষা করে অনেক যাত্রী বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন। বাতাসের তোড়ে যাত্রীরা ঘাট এলাকায় অপেক্ষা করতেও পারছিলেন না। ঝড়ো বাতাসের কারণে মেঘনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, দৌলতখান মেঘনা নদীর চ্যানেলে জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগের দিন তা ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এদিকে ক্ষণে ক্ষণে দমকা বাতাসের কারণে বহু স্থানে রাস্তার পাশের গাছ ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। ফলে ভোররাত থেকে জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে আরও জনদুর্ভোগ বেড়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউছুফ জানান, খেয়াঘাট সড়ক, তুলাতুলি, শিবপুর এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইন বিচ্ছিন্ন হয়েছে। একই অবস্থা জেলার সাতটি উপজেলাতেও।
জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের এমন হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। পানির চাপ বাড়ায় ও অমাবস্যার জো থাকায় বেশ কিছু চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
আপনার মতামত লিখুন: