রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজায় ত্রাণ লুটের প্রমাণ মেলেনি, স্বীকার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৭, ২০২৫, ১০:৫০ এএম

গাজায় ত্রাণ লুটের প্রমাণ মেলেনি, স্বীকার ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের

ছবি- সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইসরায়েল বারবার অভিযোগ করে আসছিল যে হামাস তাদের সামরিক বাহিনীর জন্য জাতিসংঘের সরবরাহ করা ত্রাণ লুট করছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহে নানা ধরনের সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-এর এক প্রতিবেদনে দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, হামাসের ত্রাণ লুটের কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। এই খবরটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘের সরবরাহ করা ত্রাণ হামাস লুট করেছে— এমন অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে নেই বলে দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। এই স্বীকারোক্তি ইসরায়েলের পূর্ববর্তী দাবির সরাসরি বিরোধিতা করছে, যা গাজায় ত্রাণ সরবরাহের সীমাবদ্ধতা আরোপের মূল কারণ ছিল।







ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেৎজ-এর এক প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট আরও দুই সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করেছে এবং সাধারণ মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে।

এই স্বীকারোক্তি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েলের ত্রাণ ব্যবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ বাড়ছে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে গাজার সাধারণ মানুষের ওপর সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে দেখছে।

গত শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও হামাসের ত্রাণ চুরি করার কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি। অথচ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই অভিযোগকে ব্যবহার করে একটি বেসরকারি সংস্থাকে সমর্থন জানিয়েছিল, যা জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত ছিল না।

বর্তমানে ইসরায়েল নিজস্ব উদ্যোগে 'গাজা রিলিফ ফাউন্ডেশন'-এর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের চেষ্টা করছে, যা জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

এদিকে, গাজায় মানবিক সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। খাদ্য সংকট ও অপুষ্টিতে মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃতের সংখ্যা ১২৭ জনে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থা (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, গাজার প্রতি তিনজনের একজন কয়েক দিন ধরে একেবারেই খাবার পাচ্ছে না। ইসরায়েলের লাগাতার সামরিক অভিযানে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, এবং ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে।