জুলাই ২৭, ২০২৫, ১১:১৫ এএম
শিক্ষার্থী সংকট দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। মফস্বলের অনেক বিদ্যালয় এই সমস্যায় ভুগছে। সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বোর্ডের অধীনস্থ একাধিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এর মধ্যে ১২টি বিদ্যালয়ে ১০ জনেরও কম শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছে, যার মধ্যে একটি বিদ্যালয়ে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী ছিল। এই ঘটনা শুধু বিদ্যালয়গুলোর অস্তিত্বকেই সংকটে ফেলছে না, বরং গ্রামীণ শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাকেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ১২টি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ জনের নিচে। এর মধ্যে একটি বিদ্যালয়ে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এসব বিদ্যালয়ের মোট ৭৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৩০ জনই ফেল করেছে, যা পাসের হারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের মতে, বাল্যবিয়ে এবং অভিভাবকদের উদাসীনতা এই সংকটের প্রধান কারণ। মফস্বলের এসব বিদ্যালয়ে যেখানে শ্রেণিকক্ষে কমপক্ষে ৩০ জন শিক্ষার্থী থাকার কথা, সেখানে আসনগুলো প্রায়শই খালি পড়ে থাকে।
ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই ১২টি বিদ্যালয়ের সামগ্রিক পাসের হার ৫৯.৪৫ শতাংশ। গার্লস স্কুলগুলোর পাসের হার ৫৬.৩৬ শতাংশ এবং উচ্চ বিদ্যালয় ও মডেল স্কুলের ছাত্রদের পাসের হার ৬৮.৪২ শতাংশ। অবাক করার বিষয় হলো, ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের পাসের হার বেশি।
মোহনপুর উপজেলার ধোরসা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় তার একমাত্র পরীক্ষার্থী নিয়ে শতভাগ পাস করেছে, কিন্তু তার জিপিএ ছিল ২.২৮। গত বছর এই বিদ্যালয়ের একমাত্র পরীক্ষার্থী ফেল করেছিল। এই ধরনের ফলাফল বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।
ওই বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমন হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের বেতন না হওয়ায় তারা ঠিকমতো স্কুলে আসতেন না, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে ভর্তি হয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির দুটি টিনশেড ভবনের একটি পরিত্যক্ত এবং অন্যটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
ধোরসা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম আক্ষেপ করে বলেন, "১৯৯৪ সালে স্কুলটি যাত্রা শুরু করে। প্রথমে ভালো শিক্ষার্থী থাকলেও পরে আস্তে আস্তে শিক্ষার্থী কমে যায়। দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়ার কারণে শিক্ষকরা স্কুলে আসা কমিয়ে দেন। এ বছর যে ছেলেটা এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে, তাকে ধরেবেঁধে পরীক্ষায় বসাতে হয়েছে।"
রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, এই স্কুলগুলোর মধ্যে শারেরহাট গার্লস হাই স্কুল থেকে ৮ জন অংশ নিয়ে সবাই পাস করেছে এবং একজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তবে অন্যান্য বেশিরভাগ স্কুলেই ফেলের সংখ্যা ছিল আশঙ্কাজনক। যেমন, এমএইচ গার্লস হাই স্কুল থেকে ৬ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল করেছে এবং জটনোশি গার্লস হাই স্কুল থেকে ৯ জনের মধ্যে ৫ জন ফেল করেছে।
এই ফলাফল এবং শিক্ষকদের মন্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, মফস্বলের বিদ্যালয়গুলোতে শুধু শিক্ষার্থীর অভাব নয়, বরং শিক্ষার মান ও শিক্ষকের উপস্থিতিও একটি বড় সমস্যা। এই সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
আপনার মতামত লিখুন: