বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

বাণিজ্যঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ৭ লাখ টন গম আমদানির উদ্যোগ বাংলাদেশের

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ১১:৩১ এএম

বাণিজ্যঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ৭ লাখ টন গম আমদানির উদ্যোগ বাংলাদেশের

ছবি- সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের কারণে সৃষ্ট বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ সরকার নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে, আগামী পাঁচ বছর প্রতি বছর সাত লাখ টন করে গম যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি বাংলাদেশের গম আমদানির বর্তমান উৎস দেশগুলো এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতির ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সমঝোতা স্মারক ও আমদানির লক্ষ্য: গত রোববার বাংলাদেশ সরকার ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশন বা যুক্তরাষ্ট্রের গম রপ্তানিকারক সমিতির সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এই স্মারক অনুযায়ী, আগামী পাঁচ বছর প্রতি বছর সরকারি পর্যায়ে দেশটি থেকে সাত লাখ টন করে গম প্রতিযোগিতামূলক দরে কেনা হবে।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো গম আমদানি হয়নি। গত ২২ বছরে অনিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ২২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছিল। অথচ গত অর্থবছরেই বিভিন্ন দেশ থেকে ৫৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এই নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে সরকারি খাতে গম আমদানির হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায়ও ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশের গম আমদানির বর্তমান চিত্র: গম বাংলাদেশের দুটি প্রধান খাদ্যশস্যের মধ্যে অন্যতম এবং এর প্রায় ৮৫ শতাংশই আমদানিনির্ভর, কারণ উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম। আমদানির সিংহভাগই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৫৯ লাখ টন গম আমদানি হয়, যার মাত্র ৬ শতাংশ সরকারি সংস্থা আমদানি করেছে।

বর্তমান উৎস দেশগুলো: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সরকারি-বেসরকারি খাতে ১৬৩ কোটি ডলার ব্যয়ে (শুল্কায়ন মূল্য ২২ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা) ৫৯ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে বিশ্বের আটটি দেশ থেকে।

এনবিআরের এক দশকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশ প্রধানত সাধারণ আমিষযুক্ত সস্তা গম আমদানি করে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে। দেশ দুটির মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চললেও, গত অর্থবছরে গম আমদানির ৪৬ শতাংশ (২৭ লাখ টন) রাশিয়া থেকে এবং ১৮ শতাংশ ইউক্রেন থেকে এসেছে। অর্থাৎ, মোট গম আমদানির ৬৪ শতাংশ এই দুটি দেশ থেকে আসে।

অন্যান্য উৎস দেশগুলো হলো:

  • কানাডা: ১৯ শতাংশ

  • আর্জেন্টিনা: ৮ শতাংশ

  • বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া: ৩ শতাংশ করে

  • ব্রাজিল: ২ শতাংশ

  • অস্ট্রেলিয়া: ১ শতাংশ

বাংলাদেশে আমদানি হওয়া গমের প্রায় ৭০ শতাংশই সাধারণ আমিষযুক্ত, যার দাম তুলনামূলক কম (প্রতি টন ২৬৪ থেকে ২৭৫ ডলার)। এই গম রাশিয়া, ইউক্রেন, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া ও ব্রাজিল থেকে আসে এবং এটি রুটি ও সাধারণ মানের বেকারি পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, উচ্চ আমিষযুক্ত গম (প্রতি টন ৩০০ থেকে ৩১৩ ডলার) কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি হয়, যা পরোটা, উন্নত মানের বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আর্জেন্টিনা থেকে উভয় ধরনের গমই আমদানি হয়।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির ইতিহাস ও সম্ভাবনা: গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনো গম আমদানি হয়নি। গত ২২ বছরে দেশটি থেকে মোট সোয়া ২২ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে বেসরকারি খাতে ১৭ লাখ টনের বেশি এবং সরকারি খাতে তিন লাখ টন আমদানি হয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুই দশকে সবচেয়ে বেশি সাড়ে চার লাখ টন গম আমদানি হয়েছিল ২০১৯-২০ অর্থবছরে, যা বেসরকারি সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, নাবিল গ্রুপসহ কয়েকটি গ্রুপ করেছিল। সরকারি খাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বশেষ গম আমদানি হয় ২০১৭ সালে।

ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক  জানান, বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বেসরকারি খাতে আমদানি বাড়ানোর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, তুলনামূলক দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমের মান ভালো। প্রতিযোগিতামূলক দাম ও সুবিধা পেলে দেশটি থেকে বেসরকারি খাতেও গম আমদানি বাড়তে পারে।

আমিরুল হক আরও উল্লেখ করেন, গমের পাশাপাশি তুলা, এলপিজি, সয়াবিন ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামাল স্ক্র্যাপ (লোহার টুকরা)—এই চার পণ্যে চার বিলিয়ন ডলার আমদানির সুযোগ আছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এর জন্য সরকারের লজিস্টিকস খাতে নীতি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।