আগস্ট ১৮, ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গড়া প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব প্রধান উপদেষ্টাকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
এনবিআরের অনুসন্ধানে ৩৪৬টি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পাচার করা সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। এর পাশাপাশি, নয়টি দেশে টাকার বিনিময়ে অর্জিত ৩৫২টি বাংলাদেশি পাসপোর্টেরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এই পাসপোর্টগুলো যে দেশগুলোতে পাওয়া গেছে তার মধ্যে রয়েছে— অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডমেনিকা, গ্রেনেডা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মালটা, সেন্ট লুসিয়া এবং তুরস্ক।
সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব জানান, দেশে বসেই বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে গোয়েন্দারা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এসব তথ্য সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, "এটি আমাদের অনুসন্ধানের আংশিক চিত্র মাত্র। আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, তা টিপ অব দ্য আইসবার্গ।"
আহসান হাবিব আরও জানান, এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসা এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের সাজা নিশ্চিত করতে সিআইসি কাজ করছে। এই প্রক্রিয়ায় ছয়টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বার্তায় জানানো হয়, বিস্তারিত জানার পর প্রফেসর ইউনূস অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সিআইসি ও পুলিশের সিআইডিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, "এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পত্তি তৈরি করতে না পারে।"
দেশের অর্থনৈতিক খাতের এই লুটপাটকে 'ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা' হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দেশের সম্পদ কীভাবে লুটপাট করেছে কিছু মানুষ, তা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর দেশ বিনির্মাণে এই লুটেরাদের আইনের আওতায় আনতে সব সংস্থাকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।