মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

গাজা দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েল জুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১০, ২০২৫, ০৫:০৯ পিএম

গাজা দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েল জুড়ে হাজার হাজার মানুষের বিক্ষোভ

ছবি- সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণে সরকারের নেওয়া পরিকল্পনার বিরোধিতা করে ইসরায়েলজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। রবিবার (১০ আগস্ট, ২০২৫) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত শুক্রবার ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজা যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে পাঁচটি নীতির অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে গাজা উপত্যকার "নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার" নীতিও রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা নগরী পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলেও জানানো হয়েছে।

শনিবারের বিক্ষোভে ইসরায়েলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে জিম্মি থাকা ৫০ জনের পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। ধারণা করা হয়, গাজায় এখনও অন্তত ২০ জন জিম্মি জীবিত আছেন। গাজা নগরী দখলে ইসরায়েলি পরিকল্পনা জিম্মিদের জীবনের ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে বলে আশঙ্কা করছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজন জিম্মিদের দ্রুত মুক্তির ব্যবস্থা নিতে ইসরায়েলের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে গাজা নগরী দখলে নেওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, "আমাদের জিম্মিদের মুক্তিতে এই পদক্ষেপ সহায়তা করবে।" সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জিম্মিদের পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি দল বলেছে, "গাজায় নতুন করে যুদ্ধের সম্প্রসারণ জিম্মি ও সৈন্যদের ঝুঁকিতে ফেলছে। ইসরায়েলের জনগণ তাদের ঝুঁকিতে ফেলতে রাজি নয়!"

জেরুজালেমে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক ইসরায়েলি বিবিসিকে বলেছেন, "আমরা যুদ্ধের অবসান চাই। কারণ আমাদের জিম্মিরা সেখানে মারা যাচ্ছেন। জিম্মিদের সবাইকে এখনই ঘরে ফেরানো দরকার।" তিনি আরও বলেন, "যা কিছু করা দরকার আমরা করব। যদি যুদ্ধ থামাতে হয়, তবে আমরা যুদ্ধ থামাব।" ম্যাক্স ক্রেশ নামের একজন সাবেক ইসরায়েলি সৈনিক, যিনি গাজায় সংঘাতের শুরুতে যুদ্ধরত সৈনিকের দায়িত্বে ছিলেন, বর্তমানে সেনাবাহিনীতে আর কাজ করতে চান না। তিনি বলেন, "আমরা ৩৫০ জনের বেশি সৈনিক যারা যুদ্ধে অংশ নিয়েছি, এখন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক যুদ্ধে সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি। কারণ সরকারের পদক্ষেপ জিম্মিদের ঝুঁকিতে ফেলছে এবং গাজায় নিরপরাধ মানুষদের অনাহারে রাখছে।"

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, তেলআবিবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সদরদপ্তরের কাছে জিম্মি ও সৈন্যদের পরিবার ইসরায়েলি সৈন্যদের যুদ্ধ বিস্তারের পরিকল্পনায় সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর আহ্বান জানিয়েছে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এয়াল জামির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা পুরোপুরি দখল করার পরিকল্পনা "একটি ফাঁদে পা" দেওয়ার সমান। এতে জীবিত জিম্মিদের জীবনের ঝুঁকি বাড়বে।

দেশটিতে পরিচালিত বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধ শেষ করার জন্য হামাসের সঙ্গে চুক্তির পক্ষে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েল গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করার পর "আরব বাহিনীর হাতে তুলে দেবে।" শুক্রবার এক্সে তিনি লিখেছেন, "আমরা গাজা দখল করতে যাচ্ছি না। আমরা গাজাকে হামাস থেকে মুক্ত করতে যাচ্ছি। এটি আমাদের জিম্মিদের মুক্তিতে সাহায্য করবে এবং গাজা যাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য হুমকি না হয় সেটি নিশ্চিত করবে।"

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভার গাজা দখল পরিকল্পনায় পাঁচটি নীতি রয়েছে: গাজায় হামাসকে নিরস্ত্র করা, সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা, গাজা উপত্যকাকে সামরিক মুক্ত করা, নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া এবং হামাস কিংবা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা।

চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা নগরী পুরোপুরি দখল করা হলে তা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ও জিম্মিদের জন্য "বিপর্যয়কর পরিণতি" ডেকে আনবে। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস রয়েছে, যদিও যুদ্ধের আগে ওই অঞ্চলের সর্বাধিক জনবহুল শহর ছিল এটি।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও আরও কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের গাজা দখলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। এই পরিকল্পনার বিরোধিতায় ইসরায়েলে সামরিক রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিয়েছে জার্মানি। রবিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।