আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৮:৪৮ পিএম
২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা দুটি ভয়াবহ ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। সেই ভয়াবহ বিপর্যয়ের ক্ষত এখনো শুকায়নি। লাখ লাখ মানুষ এখনও আশ্রয়হীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সেই দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে নিয়ে আবারও কেঁপে উঠল তুরস্কের মাটি। সোমবার পশ্চিম তুরস্কে আঘাত হানা ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্প নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বারবার কেন এমনটি ঘটছে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভূ-তাত্ত্বিক কারণ বিশ্লেষণ করছেন।
সোমবার পশ্চিম তুরস্কে রিখটার স্কেলে ৬.১ মাত্রার এক শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটে ইস্তাম্বুলের কাছে বালিকেসির প্রদেশে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবং দ্রুত আশপাশের কয়েকটি প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এতে একটি তিনতলা ভবন ধসে পড়ে। সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে চারজনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
সংবাদমাধ্যম আফাদের তথ্যমতে, ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার গভীরে। এই ভূমিকম্পটি ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ ভূমিকম্পের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে, যা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি শক্তিশালী কম্পন (৭.৮ ও ৭.৫ মাত্রা) সৃষ্টি করেছিল এবং ব্যাপক প্রাণহানি ঘটিয়েছিল।
গবেষকরা বলছেন, তুরস্কের ভৌগোলিক অবস্থানই বারবার ভূমিকম্পের মূল কারণ। দেশটি এমন একটি অঞ্চলে অবস্থিত যা পৃথিবীর ভূত্বকের সবচেয়ে সক্রিয় ভূ-কম্পন অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। তুরস্কের ভূখণ্ডের নিচে বেশ কয়েকটি ভূতাত্ত্বিক ফল্ট লাইন রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান দুটি হলো উত্তর আনাতোলিয়ান ফল্ট এবং পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট।
এই দুটি বিশাল ভূ-ফাটল হলো ইউরেশীয় ও আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষস্থল। এই ফল্টগুলোতে তীব্র চাপ জমা হলে প্লেটগুলো হঠাৎ সরে গিয়ে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, আরবীয় প্লেট ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরে যাচ্ছে, ফলে তুরস্ক ইউরেশীয় প্লেটের দিকে চাপ খাচ্ছে। এই চাপ জমে গিয়েও প্রায়ই ভূমিকম্প তৈরি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, তুরস্ক এমন টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত, যেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শঙ্কা রয়েই গেছে। যেকোনো মুহূর্তে জমে থাকা এই চাপ মুক্তি পেলে আবারও ২০২৩ সালের মতো পরিস্থিতি ফিরে আসতে পারে।