মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

ইসরায়েলের হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিপিজের উদ্বেগ

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ১১, ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

ইসরায়েলের হামলায় আল–জাজিরার পাঁচ সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় সিপিজের উদ্বেগ

ছবি- সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আল-জাজিরার ৫ জন সংবাদকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। গতকাল রবিবার (১০ আগস্ট, ২০২৫) সিপিজে'র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

গতকাল গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে আল-জাজিরার সংবাদকর্মীদের ব্যবহৃত একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা চালানো হয়। এই হামলায় আল-জাজিরার সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ, মোহাম্মদ কুরেইকেহ, ক্যামেরা অপারেটর ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফালমোয়ামেন আলিওয়া নিহত হয়েছেন বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

 

আনাস আল-শরিফের পরিচিতি ও ইসরায়েলি অভিযোগ

সিপিজের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় কাজ করা আল-জাজিরার প্রতিবেদকদের মধ্যে আল-শরিফ ছিলেন সবচেয়ে পরিচিত মুখ। ইসরায়েল আগে কোনো প্রমাণ ছাড়াই যে কয়েকজন সাংবাদিককে হামাসের সদস্য বলে অভিহিত করেছিল, তাঁদেরই একজন ছিলেন শরিফ। সম্প্রতি শরিফ গাজার মানুষের অনাহারে থাকা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ঢুকতে না দেওয়ায় তিনি ও তার সহকর্মীরা অনাহারে ভুগছেন।

সিপিজের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের একটি প্রবণতা হলো, তারা সাংবাদিকদের সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে, কিন্তু তার পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখায় না। শরিফের মৃত্যুর খবর দেওয়ার সময় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, তিনি হামাসের একটি সেলের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন এবং ইসরায়েলের সাধারণ মানুষ ও সেনাদের বিরুদ্ধে রকেট হামলা চালানোর কাজে সহযোগিতা করছিলেন।

গত ২৪ জুলাই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদরায়ি এক ভিডিওতে অভিযোগ করেন, আল-শরিফ ২০১৩ সাল থেকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসামের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন এবং যুদ্ধ চলাকালে 'সবচেয়ে অপরাধমূলক আক্রমণাত্মক চ্যানেল'-এর জন্য কাজ করছেন।

সিপিজে'র প্রতিক্রিয়া ও সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, "ইসরায়েল কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখানো ছাড়াই সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত করছে। আর এতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্য ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।"

সারা কুদাহ আরও জোর দিয়ে বলেন, "সাংবাদিকেরা বেসামরিক নাগরিক। তাঁদের কখনোই হামলার নিশানা করা উচিত নয়। এই হত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।"

গত জুলাইয়ে আল-শরিফ সিপিজেকে বলেছিলেন, আদরায়ির এ প্রচার শুধু গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি বা সুনাম নষ্ট করাই নয়, এটি বাস্তব জীবনের জন্য একটি হুমকি। আল-শরিফ তখন আরও বলেছিলেন, "আমি এসব কিছু করছি, কারণ আমার প্রতিবেদন গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি দখলদারদের অন্যায় কাজগুলো তুলে ধরছে, যা তাদের জন্য ক্ষতির। তারা আমাকে সন্ত্রাসী বলছে, কারণ দখলদারেরা আমাকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করতে চাইছে।"

সিপিজে জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় চলমান যুদ্ধে মোট ১৮৬ জন সংবাদকর্মী নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ১৭৮ জনই ফিলিস্তিনি সাংবাদিক, যাঁরা ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন।