মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের ব্যবসায় নতুন সুযোগের সম্ভাবনা

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

আগস্ট ২, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাকের ব্যবসায় নতুন সুযোগের সম্ভাবনা

ছবি- সংগৃহীত

অনেকটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকেরা। এর কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে পালটা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হয়েছে। এই শুল্ক প্রতিযোগী দেশ চীন ও ভারতের চেয়ে কম। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভবিষ্যতে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পালটা শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে তৈরি পোশাকের চাহিদা কিছুটা কমতে পারে। তারপরও রপ্তানি বৃদ্ধির বড় সুযোগ তৈরি হবে। এর কারণ চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক থাকায় সেখান থেকে প্রচুর কার্যাদেশ সরবে। তার একটা অংশ পেতে পারে বাংলাদেশ। ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় সেটি বড় আকারেও হতে পারে। তাঁরা আরও বলেন, মার্কিন বাজারে উচ্চ শুল্কের কারণে চীনারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে আগ্রাসী হতে পারে। তাতে বাজারটিতে বাংলাদেশ নতুন করে প্রতিযোগিতায় পড়বে।

পালটা শুল্ক কার্যকরের ঠিক আগমুহূর্তে গত ৩১ জুলাই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ওপর চূড়ান্ত শুল্কহার ঘোষণা করেন। তাতে বাংলাদেশের পালটা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে হয় ২০ শতাংশ। পালটা শুল্ক কার্যকরের সময়সীমাও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৭ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, "পালটা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হওয়াটা বিশাল এক স্বস্তির খবর। প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছাকাছি পালটা শুল্কের কারণে আমরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারব।"

চট্টগ্রামের আরেক প্রতিষ্ঠান ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলসের এমডি এস এম আবু তৈয়ব প্রথম আলোকে বলেন, "পালটা শুল্ক প্রতিযোগী দেশগুলোর সমপর্যায়ের হলেও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে এখন আমাদের ব্যবসার খরচ কমানো দরকার। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, যে সময়ে খরচ কমানো দরকার সে সময় বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি ও বেসরকারি ডিপোর মাশুল বাড়ানো হচ্ছে। এখন সময় এসেছে, প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে অভ্যন্তরীণ এসব ব্যয় বৃদ্ধির বোঝা কমানোর।"

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির একক শীর্ষ বড় বাজার। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৮ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ৮৬ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। রপ্তানি হয়েছে ৭৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে চীন শীর্ষস্থান দখল করে আছে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে জড়ায়। এরপর চীন থেকে তৈরি পোশাকের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। চলতি বছর ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর চীন থেকে ক্রয়াদেশ স্থানান্তর ত্বরান্বিত হয়। মাঝে পালটা শুল্কের কারণে মার্কিন ক্রেতা ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষণের জন্য ধীরে চলো নীতি নেয়।

জানতে চাইলে স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, "আমরা ভালো অবস্থানে আছি। আশা করছি, পালটা শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে চাহিদা কমলেও আমাদের রপ্তানি কমবে না। এর কারণ চীন থেকে ক্রয়াদেশ সরবে। তবে বড় দাগে ব্যবসা নিতে হলে আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারেরও কিছু সহযোগিতা লাগবে।"

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ, চীনা পণ্যে ৩০, বাংলাদেশের পণ্যে ২০, ভারতের পণ্যে ২৫, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া ও পাকিস্তানের পণ্যে ১৯ এবং কোরিয়ার পণ্যে ১৫ শতাংশ পালটা শুল্ক আরোপ করেছেন।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক প্রথম আলোকে বলেন, পালটা শুল্ক ৩৫ থেকে কমে ২০ শতাংশে নেমে আসা নিঃসন্দেহে সুসংবাদ। তবে বাড়তি শুল্কের কারণে আগামী কয়েক মাস ক্রয়াদেশ কম থাকতে পারে। এই সময়ে ছোট ও মাঝারি কারখানা যেন ব্যবসা থেকে ছিটকে না যায়, সেটি সরকারকে নজরদারিতে রাখতে হবে। পালটা শুল্কের এই হার বজায় থাকলে অবশ্যই তৈরি পোশাকের ব্যবসায় নতুন সুযোগ আসবে।