বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি, সীমিত ইন্টারনেট চালু

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ২৩, ২০২৫, ১১:২৩ এএম

কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি, সীমিত ইন্টারনেট চালু

ছবি- সংগৃহীত

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ২৩ জুলাই, মঙ্গলবার, সরকার সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং ৭ শতাংশ কোটার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন করপোরেশনের নবম থেকে ২০তম গ্রেডের চাকরির নিয়োগে এই নতুন বিধান কার্যকর হয়েছে। এই পদক্ষেপ কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।


এই প্রজ্ঞাপন জারির দিনে, ২৩ জুলাই, টানা ষষ্ঠ দিনের মতো পুরো বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন ছিল। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। জরুরি সেবা, আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমসহ কিছু খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে এই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হলেও, সব ব্যবহারকারী ইন্টারনেটের সুবিধা পাননি। এই সিদ্ধান্ত ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজনীয়তা এবং সরকারের অগ্রাধিকারমূলক খাতের প্রতি মনোযোগের ইঙ্গিত দেয়।

২৩ জুলাই সারাদেশে সাধারণ ছুটি অব্যাহত ছিল, তবে কারফিউ শিথিল করার কারণে দেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল শুরু হয়, যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কিছুটা স্বস্তি এনেছে।
 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত ছিল। আগের দিন সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে আরও প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৫১৭ জন ছিলেন। এর ফলে গত এক সপ্তাহে (১৭-২৩ জুলাই) সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার আরও ৩৮টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব ঘটনা আন্দোলনের তীব্রতা এবং সরকারের কঠোর অবস্থানকে তুলে ধরে।

এই পরিস্থিতিতে সরকার ২৪ জুলাই (বুধবার) সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে, রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকারের প্রচেষ্টার অংশ।

 

এদিকে, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি চার দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে চার দফা দাবি তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি মন্তব্য করেন যে, এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া হলে সংলাপে বসার একটি পরিবেশ তৈরি হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো: ইন্টারনেট চালু করা, কারফিউ প্রত্যাহার করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে আবাসিক হল খুলে দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা, এবং সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি সংবাদ সম্মেলনে জানায় যে, গত ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদাররিফাত রশীদ নিখোঁজ রয়েছেন। এই নিখোঁজের ঘটনা আন্দোলনকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং সরকারের প্রতি তাদের নিরাপত্তার দাবিকে আরও জোরালো করেছে।

 

উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের পরও সরকার তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় আন্দোলন তীব্র হতে থাকে। ১৬ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনে ৬ জন নিহত হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ লাভ করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। টানা পাঁচ দিন রেল চলাচল বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই শুধুমাত্র তেলবাহী ট্রেন চালু হয়, যা জরুরি সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সেই সময় বলেছিলেন, "শিক্ষার্থীদের কাউকে মামলায় জড়ানো হলে তাদের তথ্য যদি কোটা আন্দোলনকারীরা দেন, তাহলে তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখবে সরকার।" অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, "শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল খুলে দেওয়া যাবে না।" র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) তৎকালীন মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ বলেছিলেন, "ছাত্র আন্দোলনের নামে যারা নাশকতা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।" এই বক্তব্যগুলো সরকারের কঠোর অবস্থানের প্রতিফলন ঘটায়।