শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

সরাসরি ভোটে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব কমিশনের

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম

সরাসরি ভোটে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব কমিশনের

ছবি- সংগৃহীত

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো একটি দীর্ঘদিনের দাবি। বর্তমানে, সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের মাধ্যমে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়, তবে সরাসরি ভোটে তাদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। এই প্রেক্ষাপটে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নের অংশ হিসেবে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কমিশন একটি সংশোধিত প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, যা এই আলোচনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০ নারী আসন বহাল এবং সরাসরি ভোটে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার সংশোধিত প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২২তম দিনে সংশোধিত প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা হয়।

পূর্ববর্তী প্রস্তাবনা ও দলগুলোর অবস্থান: এর আগে, সংবিধান সংস্কার কমিশন ১০০ আসনে সরাসরি নারীদের নির্বাচনের কথা বলেছিল। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ নারী আসনে সরাসরি ভোটের কথা বলা হয়। এনসিপি ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ১০০ আসনের সরাসরি ভোট চেয়েছে। সিপিবি, বাসদ, জেএসডিও সরাসরি ভোটের কথা বলেছে। তবে, জামায়াতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক হারে ১০০ আসনে নারী নির্বাচনের কথা বলেছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনারা বিদ্যমান পদ্ধতিতে ১০০ সংরক্ষিত আসনের প্রস্তাব করেছে।

এ অবস্থায় কমিশন গত ১৪ জুলাই সংশোধিত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করে, যেখানে বলা হয়— যে দল ২৫টির বেশি আসনে মনোনয়ন দেবে, সেখানে তারা ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ আসনে নারীদের মনোনয়নের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওই দিন কমিশনের ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে অধিকাংশ দল।

এরপর আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বিদ্যমান ৫০ সংরক্ষিত আসন রাখার পাশাপাশি ৫ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব করেন, যা আগামী নির্বাচনে বাস্তবায়ন হবে। পরবর্তী সময়ে ১৪তম সংসদ নির্বাচনে ১০ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী রাখার প্রস্তাব করেছে দলটি।

কমিশনের নতুন সংশোধিত প্রস্তাব: এদিন নতুন প্রস্তাব উপস্থাপন করে কমিশন। সেখানে বলা হয়, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব ক্রমান্বয়ে ১০০ আসনে উন্নীত করা হবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫-এর দফা (৩) এ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর মাধ্যমে বিদ্যমান সংরক্ষিত ৫০টি আসন বহাল রেখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষরের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে ৭ শতাংশ আসনে নারী প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করবে।

ধাপে ধাপে ১০০ আসনে নারী প্রতিনিধিত্ব: কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে যে, ১৪তম জাতীয় নির্বাচনে ১৫ শতাংশ আসনে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য প্রত্যেক রাজনৈতিক দল নারী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে। রাজনৈতিক দলসমূহ এই হার পর্যায়ক্রমে প্রতি সাধারণ নির্বাচনে ৫ (পাঁচ) শতাংশ হারে বৃদ্ধি করে সংসদে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের মনোনয়নের মাধ্যমে নারীদের প্রতিনিধিত্ব ১০০-তে উন্নীত করবে। পঞ্চদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো পর্যাপ্ত সংখ্যক নারীদের মনোনয়ন প্রদান করবে যাতে ১০০ জন নারী জাতীয় সংসদে সরাসরি নির্বাচিত হবেন।

সংরক্ষিত আসনের মেয়াদ: উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের সপ্তদশ সংশোধনীর (যা ৮ জুলাই ২০১৮ সালে সংসদে পাস হয়) মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের মেয়াদ ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়। সেই হিসেবে বিদ্যমান নারী আসনের মেয়াদ আগামী ২০৪৩ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে বিধান আছে। তবে, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৬৫(৩) ও (৩ক)-এর আওতায় সংরক্ষিত নারী আসনের বিধান চতুর্দশ সংসদের পর আর কার্যকর থাকবে না।

এই প্রস্তাবগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।