বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি বাংলাদেশ ব্যাংকের

দিনাজপুর টিভি ডেস্ক

জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৭:৫৭ পিএম

সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি বাংলাদেশ ব্যাংকের

ছবি- সংগৃহীত

আধুনিক বিশ্বে ব্যাংকিং ও আর্থিক লেনদেন এখন অনেকটাই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নির্ভরশীল। এই ডিজিটাল নির্ভরতা যেমন সুবিধা এনেছে, তেমনি সাইবার হামলার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার হামলার শিকার হয়েছে, যার ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি এবং ডেটা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাদাতাদের ওপর সম্ভাব্য সাইবার হামলার আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি সতর্কতা জারি করেছে, যা দেশের আর্থিক খাতের সুরক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বাংলাদেশের ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাদাতাদের ওপর বড় ধরনের সাইবার হামলার আশঙ্কায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর সুরক্ষায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশনস টেকনোলজি (আইসিটি) বিভাগ থেকে একটি চিঠিতে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। চিঠিটি দেশের সব তফসিলি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পেমেন্ট সেবা প্রদানকারীদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।

সম্ভাব্য হামলার কারণ ও ঝুঁকির ক্ষেত্র: চিঠিতে বলা হয়, ‘আগামী দিনে দেশের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো (সিআইআই), ব্যাংক, আর্থিক খাত, স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে।’

ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সাইবার সুরক্ষা ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে সময়ক্ষেপণ না করে এখনই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে যে, সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা: বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যেসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, তা তুলে ধরা হলো:

১. সার্ভার, ডেটাবেজ ও আইটি সিস্টেম নিয়মিত আপডেট করতে হবে। ২. অপ্রয়োজনীয় পোর্ট বন্ধ এবং কমপক্ষে অনুমতিভিত্তিক এক্সেস নিশ্চিত করতে হবে। ৩. সংরক্ষিত ডেটার গুরুত্ব অনুযায়ী নিয়মিত ব্যাকআপ ও রিস্টোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। ৩-২-১ ব্যাকআপ কৌশল অনুসরণে উৎসাহিত করা হয়েছে। ৪. ডেটা স্থানান্তর, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করার ক্ষেত্রে এনক্রিপশন বাধ্যতামূলক। ৫. গুরুত্বপূর্ণ সব সিস্টেমে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (এমএফএ) চালু করতে বলা হয়েছে। ৬. নিরাপত্তা নজরদারির জন্য এবং অন্যান্য সিকিউরিটি টুলস ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ৭. এন্ডপয়েন্ট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (ইডিআর), অ্যান্টিভাইরাস ইত্যাদি সফটওয়্যারের হালনাগাদ এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ৮. সম্ভাব্য হামলার ঘটনা মোকাবিলায় ইনসিডেন্ট রেসপন্স প্ল্যান এবং বিশেষায়িত টিম প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। ৯. সন্দেহজনক লগইন, ফাইল পরিবর্তন বা এক্সটারনাল সংযোগ মনিটর করতে এবং প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে। ১০. রিমোট এক্সেস, ভিপিএন ও প্রিভিলেজড অ্যাকাউন্টস নিয়মিত রিভিউ করে প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণ আরোপের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১১. সাইবার হামলার কোনো লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। ১২. ২৪/৭ বেসিসে নিরাপত্তা মনিটরিং সেন্টার পরিচালনায় প্রয়োজনীয় জনবল নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ১৩. সিস্টেমের উচ্চ সক্ষমতা ও স্থায়িত্ব বজায় রাখতে লোড ব্যালেন্সার স্থাপন ও বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ১৪. প্রতিষ্ঠানের বিজনেস কনটিনিউটি প্ল্যান অ্যান্ড ডিজাস্টার রিকভারি প্ল্যান হালনাগাদ করে তা বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, এসব পদক্ষেপের লক্ষ্য হলো— যেকোনো সম্ভাব্য সাইবার হামলা প্রতিরোধ, ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং ঝুঁকি মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।